
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক কৌশলগত সমীকরণের আবির্ভাব ঘটেছে। আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানে একজোট হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দুই প্রভাবশালী শক্তি-ইরান ও তুরস্ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঐক্য ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনে চলমান মানবিক বিপর্যয়, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং ইরানের ওপর মার্কিন চাপের প্রেক্ষিতে ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। গাজাবাসীর প্রতি তুরস্কের ঐতিহ্যগত সহানুভূতির পাশাপাশি ইরানের প্রতিরোধমূলক নীতি এই জোটকে শক্তিশালী করেছে।
তুরস্ক ইতোমধ্যেই নিজস্ব সামরিক প্রযুক্তি—বাইরাক্তার ড্রোন, টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র, আথমাকা ক্রুজ মিসাইল এবং হিসার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—উন্নয়নের মাধ্যমে একটি হেভিওয়েট শক্তিতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের অটল প্রতিরোধের ইতিহাস গোটা বিশ্বে সুপরিচিত।
গাজা সংকট এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে মার্কিন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি মাস্কটে (ওমান)। ইরান ও তুরস্কের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস সারাকচির মধ্যে ফোনালাপ এবং সরাসরি বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। ইরান এই আলোচনায় তুরস্কের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং জানানো হয়েছে, তুরস্ক এই সংলাপে পূর্ণ সমর্থন জানাতে প্রস্তুত।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান নিজ দেশেও একাধিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ফিলিস্তিনের অধিকারের প্রশ্নে আপসহীন অবস্থান নিয়েছেন। সম্প্রতি গাজা ইস্যুতে তার একাধিক শক্ত অবস্থান এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপে তা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি গাজা পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারের লড়াই থেকে কখনোই সরে আসবে না তুরস্ক।,
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের স্থিরতা এবং তুরস্কের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি একত্রিত হয়ে এমন একটি বলয় তৈরি করতে চলেছে, যেখানে ইসরায়েল ও আমেরিকার প্রভাব ক্ষীণ হতে বাধ্য। এই ঐক্য হতে পারে পশ্চিমাদের আধিপত্য মোকাবিলায় মুসলিম বিশ্বের এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধের সূচনা।
এছাড়া খবর রয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শিগগিরই ইরান সফরে যাচ্ছেন, যা এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম শক্তির নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা আরও বাস্তবতা পাবে।’