আমাদের নগ্ন করে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে: জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের সঙ্গে প্রথমে নিজেদের পছন্দের লোকদের সমঝোতা করেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে বাকিদের নগ্ন করে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন তারা। যার প্রতিফলন সারাদেশে দলের ব্যাপক ভরাডুবি। রোববার (১৪ জানুয়ারি’) রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপার পরাজিত প্রার্থীরা এসব কথা বলেন। এসময় তাদের সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।

জাপার পরাজিত প্রার্থীরা বলেন, লোভ-লালসার রাজনীতি কর্মীরা করেন না, করেন নেতারা। তাদের বলির পাঁঠা আমরা। অনেকে পাশে থাকার আশা দিলেও পরে আর থাকেননি। দেখা পর্যন্ত করেননি চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তবুও নির্বাচনে ভালো কিছু করতে উৎসাহ নিয়ে কাজ করেছিলাম। কিন্তু আর্থিক ও মানসিক সাহায্য পাইনি। তবে ভুলভ্রান্তি পেছনে ফেলে সামনে এগুতে হবে। জনগণের আস্থার দাম দিতে হবে।

জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, চেয়ারম্যান-মহাসচিবের প্রতি আহ্বান দলকে বাঁচান। বহিষ্কার অব্যাহতি বাদ দিয়ে সবাই দলের হয়ে কাজ করবো। দলকে সুসংগঠিত করুন। দল কেউ ভাঙতে পারবে না। আপনাদের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবো।

শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, অনেকে নির্বাচন থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন। আমি না করেছিলাম। কারণ দলের ক্ষতি হবে। মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বললেন, টাকা পেয়েছি। কিন্তু তিনি কাউকে না দিয়ে চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রীকে দিয়ে চলে গেছেন। পরে কেউ টাকা না পেয়ে সবাই এলাকায় চলে যান। ২৬টি জায়গা দেখে নৌকা তুলে নিয়েছে, বাকিদের কী হবে? সরকার টাকা দিয়েছে অনেক। শেরিফা কাদের আসন পাওয়া মাত্র সবাইকে ভুলে গেলো নেতারা।

তিনি বলেন, ভয়াবহ অবস্থা দলের। এজন্য দায়ী চেয়ারম্যান-মহাসচিব। ভিক্ষা নিয়েও সেটার মধ্যে জালিয়াতি করেছেন তারা। আপনাদের পোস্টার দেখে আওয়ামী লীগও লজ্জা পায়। আপনাদের ভেলকিবাজি সবাই বুঝে গেছে। তবে ক্ষতি হয়েছে দলের। সব দায় চেয়ারম্যান-মহাসচিবের। আঘাতপ্রাপ্ত আর বহিষ্কারপ্রাপ্ত লোক একা হয়ে গেছে।

সাইফুদ্দিন মিলন বলেন, নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টি হিরো হতো। জিএম কাদের অনেক কিছু করেছেন দলের জন্য। তার সব শ্রম বৃথা হয়ে যাবে। আপনার বিকল্প নেই। সঠিক নেতৃত্বে আসার আহ্বান জানাই।

সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী বলেন, নিজের ক্ষতি করে পার্টির আশ্বাসে নির্বাচনে এসেছিলাম। আসন ভাগাভাগির মধ্যে একটা পাবো আশা ছিল। টাকা কিছু পাবো মনে করেছিলাম। কিন্তু পার্টি থেকে পাইনি। সম্পদ, দোকান বিক্রি করে শেষ হয়ে গেছি। আমাদের জন্য বরাদ্দ অর্থ কোথায় গেলো, কে খেলো? তদন্ত করে দেখুন। নেতৃত্বে পরিবর্তন দরকার।

নোয়াখালী-৩ আসনের প্রার্থী সোয়াদ বলেন, ক্ষোভের কথা বলতে এসেছি। সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনে নামিয়ে কথা রাখেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। এই নির্বাচনে যেতে চাননি ৫৯ জেলার লোক। কারও সঙ্গে জোট করবো না বলে আমাদের ডেকে পরে আসন ভাগাভাগি করে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। গুটিকয়েক লোক ভোগ করে আমরা পাই না।

তিনি বলেন, ৫ বছর পর পর মিথ্যা আশ্বাস পাই আমরা। চেয়ারম্যান হওয়ার পর বদলে গেছেন জিএম কাদের। এলাকায় সম্মান নিয়ে চলি। কিন্তু আপনার কারণে তা হারিয়ে ফেলেছি। ভোট চাইতে গেলে মানুষ বলে মাথা বিক্রি করে এসেছি। হঠাৎ একদিন রাতে জানলাম জাপা নির্বাচনে যাবে না। পরদিন বিকেলে শুনলাম যাবে। ২৬ আসনে সমঝোতা হয়ে গেছে। বারবার দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করে মুনাফিক হয়ে যাচ্ছি। জোর করে কাউকে নির্বাচনে নেয়া যায় না। আপনি লোভে পড়ে গেছেন।

শামিম হায়দার পাঠান বলেন, জাতীয় পার্টি দালালি করলেও বড় দালাল হতে পারেনি। এবারের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের নির্বাচনে ৬০টি আসন পেতে পারতাম। ২৬টি থেকে নৌকা সরানো হলেও বেশিরভাগের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নেতৃত্ব বৈষম্য করেছেন প্রার্থিতার ক্ষেত্রে। জেনেশুনে বিষপান করেছেন। তারা অনেককে টাকা দিয়েছেন নির্বাচন করতে। দলকে বিপদে ফেলে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছেন তারা। তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

সিরাজগঞ্জ- ৫ আসনের প্রার্থী বলেন, আমাকেও হয়তো বহিষ্কার করা হবে। তাতে পরোয়া করি না। জাপা ভাঙতে আসেনি। তবে চক্রান্তকারীদের সরাতে হবে। দালালদের সরাতে হবে। শেরিফা কাদেরকে কেন এ আসন দেয়া হলো? রেজাউল, চুন্নুর কারণে জাপার এই অবস্থা। সারাবছর সরকারের বিরুদ্ধে থেকে কেন হঠাৎ তাদের অধীনে নির্বাচনে গেলো দল।

সিলেট-২ আসনের ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, লজ্জাজনক পরাজয়ের পরও কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। জিএম কাদেরের স্ত্রীর কি অবদান দলে? আগে দলের গণতন্ত্র পরে দেশের। পরিবারতন্ত্র চলছে জাপায়। দলের জন্য কিছু করেননি তিনি। ১৮ এর নির্বাচনে রওশন এরশাদ টাকা দিয়েছেন প্রার্থীদের। তিনি সমঝোতা করে অনেক আসন এনেছিলেন। আপনি সমঝোতাতেও ব্যর্থ, নির্বাচনেও।

বাবলা বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদেরকেই তা ঠিক করতে হবে। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নয়। সংবিধানের ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনে গেছি। আল্টিমেটামের সঙ্গে সম্পর্ক নয়। কে দিলো, কেন দিলো তদন্ত করে বের করবো। ঐক্যের ভিত্তিতে দল করতে চাই আমরা।

লিয়াকত আলী খোকা বলেন, সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। একেক সময় একেক সিদ্ধান্তের ফল এটি। সারাদেশে জাতীয় পার্টির শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। এখান থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় দল ধ্বংস হয়ে যাবে।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

গাজায় ধ্বংস এক হাজার মসজিদ, রমজানেও নেই নামাজের জায়গা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলের হামলায় এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা। ইসরায়েলের হামলা

প্রেস ক্লাবের ৩৭ সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত

সংবাদের আলো: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যায় উসকানি দেওয়া এবং পতিত সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার দায়ে ৩৭ জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ স্থগিত করা

সিরাজগঞ্জে দোকান কর্মচারী হত্যা, আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১২

মো: মাসুদ রানা. সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার আলাউদ্দিন স্টোরের কর্মচারী ভিকটিম শামিম শেখকে চাঞ্চল্যকরঅপহরণের পর হত্যা ও অর্থ লুটের অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের

এবার পদত্যাগ করছেন ইউনুস সরকারের ৩ উপদেষ্টা,জেনে নিন তাদের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আসছে বদল। কিছুদিনের মধ্যেই নিজেসহ উপদেষ্টা পরিষদে থাকা শিক্ষার্থীরা পদ ছাড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ

সালমান এফ রহমানের ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি

উল্লাপাড়ার শ্যামলী পাড়া থেকে বড়পাঙ্গাসী সড়ক আগাছা ও দখলে বিপর্যস্ত চলাচলে চরম ভোগান্তি

জুয়েল রানা: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার শ্যামলী পাড়া থেকে শুরু করে বড়পাঙ্গাসী পর্যন্ত বিস্তৃত গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়কটি বর্তমানে দখল ও অব্যবস্থাপনার কারণে চরমভাবে বিপর্যস্ত। কয়েকটি ইউনিয়নরর