
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হচ্ছে, তাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের বিবরণ দেখিয়ে জনগণ শীর্ষে উঠছে। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতির বিবরণে মানুষ হতবাক। তাদের যে অঢেল সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদের হিসেব কষতে কষতে মানুষ যেন অঙ্কই ভুলে গেছে। এরকম বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে যে, সরকারি কর্মচারী বা সরকারি চাকরি কি তাহলে সোনার হরিণ? সরকারি চাকরি পেলেই কি তাহলে আলাদিনের চেরাগ পাওয়া যায়’?
কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ তাদের দুর্নীতির কথা গণমাধ্যমে আসছে না। এটির একাধিক কারণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হল যে, প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষমতা এবং প্রভাব। দুর্নীতি দমন কমিশন এখন নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মূলত প্রশাসন ক্যাডারের দ্বারা এবং অন্যান্য জায়গায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি এতটাই যে তাদের দুর্নীতির কাহিনী গণমাধ্যমে আসছে না। অথচ অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, বেনজীর আহমেদ বা মতিউর রহমানের দুর্নীতি প্রশাসন ক্যাডারের অনেক সাবেক কর্মকর্তার দুর্নীতি তার চেয়েও বেশি। তারা কৌশলে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গুলো বলছেন, সাবেক একজন সচিব যিনি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি এখন স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন। সেখানে তার বিপুল বিত্ত এবং বিনিয়োগের খবর পাওয়া যায়।
সরকারি আরেকজন কর্মকর্তা যিনি ব্যাংকিং সেক্টরের দায়িত্ব পালন করতেন, তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। এখন তিনি লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনিও সেখানে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।’
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মন্ত্রী থাকাকালীন সময় বলেছিলেন যে, কানাডার বেগম পাড়ায় আমলাদের বাড়ি-ঘর বেশি। রাজনীতিবিদের বাড়ি-ঘর কম।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ১৭ জন সাবেক আমলার বাড়ি-ঘর রয়েছে কানাডার বিভিন্ন রাজ্যে। এই সমস্ত সম্পদগুলো তারা বৈধ ভাবে তৈরি করেছেন এমন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। অন্তত ৩ জন সাবেক হামলার খবর পাওয়া গেছে যারা দুবাইতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বানিয়েছেন এবং সেখানে তারা বিভিন্ন রকম ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশে তারা খুব কম সময় থাকেন। বেশির ভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করেন। তবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মধ্যে একটা অদ্ভূদ জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে তারা দেশে কম সম্পদ রেখেছেন। তাদের বিত্ত সম্পদের একটা বড় অংশ বাইরে পাচার করে দিয়েছেন।
অনেকে মনে করেন বেনজীর আহমেদ বা মতিউর রহমান যেমন দেশে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা তেমনটি করেননি। বরং তারা তাদের সমস্ত সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছেন বিদেশের দেশগুলোতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সাবেক আমলাদের। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলছেন না, তাদের সম্পদ নিয়ে কোন আলাপ-আলোচনাও হচ্ছে না।’