
ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: আন্দোলনের কারণে রাজধানীজুড়ে এখন ব্যাপক নৈরাজ্য চলছে। প্রতিদিনই রাজপথে দেখা যাচ্ছে কোনো না কোনো আন্দোলন কর্মসূচি। এসবের মধ্যে রয়েছে মিছিল-সমাবেশ, অবরোধ, ঘেরাও ইত্যাদি।
ফলে রাজধানীতে তীব্র যানজট হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। ব্যাঘাত ঘটছে সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্মেও। আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সুযোগ সন্ধানীরাও তৎপর। তারা সুকৌশলে ষড়যন্ত্রমূলক নানা ঘটনাও ঘটাচ্ছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ ও শাহবাগ আন্দোলনের ‘হট স্পটে’ পরিণত হয়েছে। এ দুটি স্থানে প্রায় প্রতিদিনই থাকে নানা কর্মসূচি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এসব আন্দোলন মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত আট মাসে এমন ২৫০টিরও বেশি কর্মসূচি হয়েছে রাজধানীতে।
স্পটগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনকারীদের কোনো কোনো দাবির যেমন যৌক্তিকতা রয়েছে আবার অযৌক্তিক কিছু দাবিও সামনে আসছে। দীর্ঘদিনের ‘বঞ্চনা’ আর ‘ক্ষোভের’ এসব আন্দোলন নিয়ে প্রথমদিকে সরকার নমনীয় অবস্থানে থাকলেও ক্রমান্বয়ে সরকারও অনেকটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। এজন্য লাঠিচার্জ, টিয়ালশেল নিক্ষেপসহ শক্ত হাতে আন্দোলন দমন করতে হচ্ছে। কখনো কখনো নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে হচ্ছে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ঘটনাও ঘটছে।
শুরুর দিকে এসব আন্দোলনকে স্বাভাবিক মনে করা হলেও এখন ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করা হচ্ছে খোদ সরকারের তরফ থেকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র থাকার কথা সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। এর আগে একটি বাহিনীর সচিবালয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করেছিল সরকার।
একটি আন্দোলনের সুরাহা না হতেই রাজপথে নতুন নতুন আন্দোলন কর্মসূচির পেছনে নানা ষড়যন্ত্র ও নাশকতার আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও রয়েছে। অনেক দিক থেকে এই সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টায় নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। সব মিলিয়ে আন্দোলনের নামে রাজধানীজুড়ে চলছে এক ধরনের নৈরাজ্য।
ফ্যাসিস্ট হসিনার পতনের পর গত বছর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর থেকেই সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা গ্রুপ তাদের দাবি আদায়ে রাজপথে নামতে শুরু করে। মিটিং-মিছিল, রাজপথ অবরোধ, ঘেরাওসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচি মোকাবিলায় একদিকে সরকারকে যেমন বেগ পেতে হচ্ছে, অপরদিকে রাজপথ বন্ধ করে কর্মসূচি পালনের কারণে সৃষ্ট তীব্র যানজটে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ৬ মাসে ১৮০টি আন্দোলন হওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ দুই মাসে এই সংখ্যা আড়াইশ’ ছাড়িয়ে গেছে বলে প্রেস উইং মনে করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের আন্দোলনের সুযোগ সীমিত থাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় দাবি-দাওয়া আদায়ের হিড়িক পড়ে যায়। যা অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
সরকারের একশ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস রাজপথের আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন। ওই ভাষণে তিনি বলেন, আমাদের কাছে আপনাদের আরো অনেক দাবি-দাওয়া আছে। দীর্ঘদিনের অপশাসন, অত্যাচার, অনাচারের ফলে আপনাদের মনে অনেক ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে। আমরা আপনাদের প্রতিটি দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু সেজন্য আপনারা সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে আমাদের সবারই অসুবিধা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন মোকাবিলায় শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার নমনীয় নীতি গ্রহণ করে। পতিত সরকারের মতো দমনপীড়ন নীতির পরিবর্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মানবিক আচরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকল্প রায়ট ম্যানেজমেন্টের কথাও বলা হয়। এর প্রেক্ষাপটে পুলিশের তরফ থেকেও কোনো ধরনের বল প্রয়োগের পরিবর্তে ‘বিনীত অনুরোধের’ সিদ্ধান্তও হয়। সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও একাধিক অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অপ্রয়োজনে বলপ্রয়োগ না করার নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে।
সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তাদের নমনীয় নীতির উদারতার সুযোগেই আন্দোলনের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। কখনো কখনো সরকারকে কিছুটা কঠোর হতে দেখা গেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ম্যাটস শিক্ষার্থী, এপ্রিলে ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দু-একটি আন্দোলন ছাড়া কোথাও বড় ধরনের বল প্রয়োগ করা হয়নি বলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে বড় ঘটনা ঘটেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনে। আন্দোলনকারীরা কাকরাইলে বেরিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় জলকামানও ছোড়া হয়। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী ও ছাত্রসহ অর্ধ শতক মানুষ আহত হন।
গত আট মাসের দাবি-ধাওয়ার আন্দোলনকে শুরুর দিকে সেই অর্থে ‘ষড়যন্ত্র’ বলতে চাননি সরকারের সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে সরকারের বক্তব্য ছিল, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের না পাওয়ার বেদনা, ক্ষোভ ও মন খুলে কথা বলতে না পারার বঞ্চনা থেকেই মানুষ রাজপথে নামছে। তবে সর্বপ্রথম ‘ষড়যন্ত্রের’ প্রশ্ন ওঠে গত বছরের আগস্টের শেষদিকে আনসার বাহিনীর আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে সচিবালয়ের মতো কেপিআই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ায় এই ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা আরো জোরালো হয়।
ওই ঘটনার দিন দশেক আগে আনসারের মহাপরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীমের ভাই এ কে এম আমিনুল হককে। আন্দোলনের পেছনে তার হাত ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমানে এনসিপির নেতা হাসনাত ওই সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন। ওই সময় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করে বলেছিলেন, আনসাররা যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখিয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব ইশরাক হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা চারদিন ধরে নগরভবন ও তার আশপাশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে তার কর্মী-সমর্থকরা। এতে নগরভবনে অচলবস্থা সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার আন্দোলনকারীরা নগরভবন ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে। এর অংশ হিসেবে গুলিস্তানের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।
গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে ইশরাক হোসেন বলেন, সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কি ভূমিকা পালন করবেÑ তা ক্লিন কাট বুঝিয়ে দিল। এরা হাসিনার মতোই বিচারকদের হুমকি দিয়েছে।
এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে আইনি জটিলতা থাকার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, জটিলতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। নগরবাসীর ভোগান্তি নিরসনে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
সচিবালয় ভাতা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে গতকাল সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরে অর্থ উপদেষ্টার আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে। তবে তারা ১০ দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল ইউজিসির সামনে অবস্থান নিয়েছেন গাজীপুরে অবস্থিত ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা ইউজিসির সামনে অবস্থান নেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা তিতুমীরের জন্য স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবি না মানা হলে ‘কঠিনতম কর্মসূচি’ পালনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার চাকরিতে পুনর্বহাল, শাস্তি মওকুফ ও ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবিতে বরখাস্ত এবং অব্যাহতিপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিনভর বিক্ষোভ করেন। অতীতের সব নজির ভঙ্গ করে পালিত এ কর্মসূচিতে কিছু সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেও পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সন্ধ্যায় অবশ্য সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উল্লেখ করে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
সশস্ত্র বাহিনীর এ অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও রোববার রাজধানীতে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী কর্মসূচি পালন করেছে। এর মধ্যে ছিল ইশরাকের শপথের দাবিতে চলমান বিক্ষোভ, ছাত্রদলের শাহবাগ থানা ঘেরাওসহ শাহবাগ অবরোধ, শিক্ষকদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও, বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ; এনবিআর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ ও কর্মসূচি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কফিন মিছিল, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সাদা দলের শিক্ষকদের মানববন্ধন। এ ছাড়া ওইদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা ঝটিকা মিছিলও করেছেন। অবশ্য এ ঘটনায় দলটির ১২ কর্মীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে তিন দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গত ১৪ মে ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেয়। সেখানে টানা তিন দিন অবস্থান করে দাবি আদায় করেই তারা ঘরে ফেরে। অবশ্য এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় পানির বোতল ছুড়ে মারার ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র থাকার কথা উল্লেখ করেন খোদ উপদেষ্টা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন ভূঞা আমার দেশকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বিশেষ সময়ে বিশেষ দায়িত্ব নিয়েছে। এ সরকারের কাজ হচ্ছে লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে নিয়ে আসা। কিন্তু শুরু থেকে আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা যেন দাবি-দাওয়া আদায়ের পিরিয়ড। বিভিন্ন গোষ্ঠী এ সময়টাকে নিজেদের দাবি আদায়ের উপযুক্ত সময় মনে করছে। এভাবে চলতে পারে না। এর জন্য প্রতিনিয়ত যে জনভোগান্তি হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
আন্দোলনের পেছনে সরকার যে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছে- তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলেও তাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় রয়ে গেছে। কাজেই তারা চাইবে যে কোনোভাবেই হোক, এ সরকারকে ব্যর্থ করতে। আমার কাছে মনে হয় এসবের পেছনে কোনো না কোনো গোষ্ঠীর একটি ষড়যন্ত্র রয়েছে। পতিত সরকার কোনোভাবেই এ সরকারকে মেনে নিতে পারেনি। বর্তমান সরকার তাদের গুম, খুন, অপকর্ম, দুর্নীতি, লুটপাটের বিচার করছে। তারা এই বিচারের পথ রুদ্ধ করতে চাইবে।
প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ আমার দেশকে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াইশর মতো আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে এ সরকারকে। এর সবগুলোকে আমরা অযৌক্তিক মনে করছি না। গত সাড়ে ১৫ বছর তো সেই অর্থে মানুষ দাবি-দাওয়া নিয়ে আসতেই পারেনি। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান ও চাওয়া-পাওয়া থেকে দাবি তুলছে। সরকার এসবকেই আমলে নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা মনে করি, অনেক পরিকল্পিত আন্দোলন আছে। কিছু কিছু সময়ে তাদের চিহ্নিতও করা হচ্ছে।
সমস্যা পূরণে সরকার বরাবরই আন্তরিক উল্লেখ করে ফয়েজ বলেন, সরকার শুরু থেকেই আন্দোলনের পথে না গিয়ে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছে। আমাদের এই অনুরোধ এখনো অব্যাহত রয়েছে। জনভোগান্তি হয়- এমন আন্দোলনে না গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করলে নিশ্চয়ই সমস্যার সমাধান হবে।’