
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আদালতে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিচার কার্যক্রম দ্রুত হবে, কর্মঘণ্টা ও রাষ্ট্রীয় ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং মামলাজট কমবে বলে মনে করছে পুলিশ ও আইনজীবীরা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে ডিএমপি।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল থেকে পুলিশ সদস্যদের নামে অন্তত ৯শ সমন আসে। কিন্তু অসুস্থতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও তদন্ত কাজে ব্যস্ততার কারণে গড়ে ২শ সদস্য সাক্ষ্য দিতে যান। বাকিদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ আটকে থাকে। ঢাকার বাইরে সাক্ষ্য দিতে গেলে দুই-তিন দিন পর্যন্ত সময় নষ্ট হয়, ভাতা ও জ্বালানি ব্যয় হয়। ভার্চুয়াল সাক্ষ্য চালু হলে এসব ঝক্কি কমবে এবং বিচারকাজ ত্বরান্বিত হবে।
২০২০ সালে করোনাকালে আদালতে অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে জামিন শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। পরে তা সীমিত আকারে চললেও সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট ভার্চুয়াল হাজিরা, জামিন শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বিস্তারিত নির্দেশনা জারি করেছে। এর আলোকে ডিএমপি নিজেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. সরওয়ার এক সভায় ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদানের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও উপস্থিত ছিলেন।
ডিএমপি জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে মোট ৭২ হাজার ৩৮৬টি সমন ইস্যু হয়। এর বিপরীতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন মাত্র ২২ হাজার ৯৫৪ জন পুলিশ সদস্য। এর ফলে মামলার অগ্রগতি ব্যাহত হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনবল সংকট তৈরি হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, “আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে বিপুল কর্মঘণ্টা ও জ্বালানি খরচ হয়। অনলাইনে সাক্ষ্য নিলে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয় হবে এবং বিচার কার্যক্রম গতি পাবে।”
মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. আজিজুল হক দিদার জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় ইতোমধ্যেই আসামিদের অনলাইনে হাজিরা নেওয়া হচ্ছে। আগামী মাস থেকে পুলিশ সাক্ষীদেরও ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম সংস্থানের কাজ চলছে।
আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভার্চুয়াল সাক্ষ্য চালু হলে মামলার গতি বাড়বে, সাক্ষীদের জন্য ঝক্কি কমবে এবং আদালতের কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে।