
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের কাছ থেকে চলতি সপ্তাহে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি পেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। একই সময়ে ভারতের আদানি পাওয়ারকে বকেয়া হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৩৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। এই অর্থ পরিশোধ এমন এক সময়ে ঘটল, যখন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির বৈধতা নিয়ে দেশে ব্যাপক বিতর্ক চলছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিশেষ আইনের আওতায় করা আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে শুরু থেকেই। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়নের দাবি ওঠে। এমনকি চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের অক্টোবরে ১১টি বিতর্কিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনায় গঠিত হয় জাতীয় কমিটি, যা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
তবে পর্যালোচনা প্রক্রিয়া চলাকালে আদানির সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি শর্ত মেনে চুক্তি কার্যকর ও বিল পরিশোধ অব্যাহত রেখেছে বিপিডিবি। পিডিবি’র হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত আদানির কাছে বকেয়া ছিল ৭০ কোটি ডলার। তবে আদানির দাবি, বকেয়া ৯০ কোটি ডলার। মূলত কয়লার দাম নির্ধারণ নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে এ ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানির কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। তবে কয়লার মূল্য কাঠামোতে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থির সূচকের অতিরিক্ত নির্ভরতা ও পরিবহন ব্যয় অত্যধিক ধরার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, গত সোমবার আদানি পাওয়ার ও বিপিডিবির মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকে আদানি পক্ষ থেকে কয়লার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মতি দেওয়া হয়। তবে তারা শর্ত দেয়, মার্চ পর্যন্ত বকেয়া বিল ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করলে বিলম্ব ফি বাবদ ২০ মিলিয়ন ডলার ছাড় দেওয়া হবে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে বিপিডিবি এই বকেয়া পরিশোধ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, “বকেয়া তো পরিশোধ করতেই হবে, না হলে সেটি পাহাড়সম হয়ে যাবে। আমরা আমাদের হিসাব অনুযায়ী পরিশোধ করেছি। উভয় পক্ষের দাবি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার চেষ্টা চলছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যমান চুক্তির আইনগত ও অর্থনৈতিক দিকগুলো পুনর্মূল্যায়ন না করে এইভাবে অর্থ পরিশোধ দীর্ঘমেয়াদে বিপিডিবিকে আরও চাপের মুখে ফেলতে পারে।