স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। শনিবার তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই সময়টিই মোড় ঘোরাতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে চার ঘণ্টাব্যাপী এক রুদ্ধদ্বার আলোচনায় ড. ইউনূস স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, যে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি তিনি জাতিকে দিয়েছেন, তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি দায়িত্বে থাকতে অনিচ্ছুক।
উপদেষ্টা পরিষদে বিভাজন
বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাল্টাপাল্টি করে ছয়জন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। বিএনপি দাবি তুলেছে খলিলুর রহমান, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার অপসারণের; অন্যদিকে এনসিপি চেয়েছে ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. সালেহউদ্দিনের পদত্যাগ।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে উত্তেজনা
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত এবং নির্বাচিত সরকারই মানবিক করিডোর ও বন্দরের মতো ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপযুক্ত। এই বক্তব্য সরকারের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে এবং রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত?
ভারতীয় কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে অভ্যুত্থানের সম্ভাব্য ইঙ্গিত হিসেবে প্রচার করেছে। আনন্দবাজার, ইন্ডিয়া টুডে, দ্য উইকসহ একাধিক মিডিয়া সেনা ও সরকারের মধ্যকার সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব নিয়ে নানা ব্যাখ্যা দিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
বিএনপি: সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে।
জামায়াতে ইসলামী: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসলামী দলগুলো: বিভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
জুলাই বিপ্লবীরা: প্রধান উপদেষ্টাকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে তার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
বিশ্লেষকদের অভিমত
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এম মনিরুজ্জামান সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ‘জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান একে সংবিধান ও সেনাবিধি লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "এ ধরনের বক্তব্য সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।"
বর্তমান পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ ও নির্বাচনের রূপরেখা নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়বে। শনিবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আশঙ্কা করছেন সবাই।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.