আকাশ প্রতিরক্ষায় বড় ফাঁক, ঝুঁকিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই হয়ে উঠেছে প্রথম ও প্রধান প্রতিরক্ষা স্তম্ভ। ইরান-ইসরায়েল, রাশিয়া-ইউক্রেন কিংবা ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে এই সত্য আরও স্পষ্ট হয়েছে। অথচ ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের আকাশসীমা রয়ে গেছে প্রায় অরক্ষিত, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের ভাষায়“নাজুক ও সীমিত”।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এখনো নেই কার্যকর মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল। বর্তমানে ব্যবহৃত প্রধান অস্ত্র ২০১১ সালে চীন থেকে কেনা এফএম-৯০ স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যা উচ্চগতির জেট বা ক্রুজ মিসাইল ঠেকাতে সক্ষম নয়। এছাড়া নেই মাল্টি-লেয়ারড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, যা আধুনিক সামরিক শক্তিগুলোর নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কাছে রয়েছে ৪৪টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ৩৬টি চীনের তৈরি পুরনো এফ-৭ এবং ৮টি সোভিয়েত আমলের মিগ-২৯। রয়েছে ৭৩টি হেলিকপ্টার এবং মাত্র ৬টি তুরস্কের বায়রাখতার টিবি-২ ড্রোনসহ ৪৪টি ড্রোন। আধুনিক রাডার যুক্ত হলেও সার্বিক প্রতিরক্ষা এখনো পুরনো কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল।

মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একেবারে জিরো না হলেও জিরোর কাছাকাছি। আধুনিক যুদ্ধে এই সক্ষমতা যথেষ্ট নয়।”

এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন বলেন, “স্কাই সুপিরিয়রিটি যার, যুদ্ধে জয়ও তার। বাংলাদেশকে অন্তত এমন ব্যবস্থা গড়তে হবে যাতে সমুদ্রসীমাসহ পুরো আকাশসীমায় নজরদারি ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।”

আকাশ প্রতিরক্ষায় রাডার ও ড্রোন-বিরোধী প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে, তবে তা এখনও পর্যাপ্ত নয় বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে ৩৭তম হলেও আকাশ প্রতিরক্ষায় পিছিয়ে আছে অনেকটাই।

সাবেক কর্নেল মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা নীতি প্রতিরক্ষামূলক হলেও বাস্তবে কার্যকর প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য বাজেট, প্রযুক্তি ও গবেষণার সমন্বয় দরকার।” তিনি আরও বলেন, “শুধু সেনাবাহিনীর নয়, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগেই গড়ে উঠতে পারে একটি কার্যকর ও আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর। কারণ, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা—সবকিছুর ভিত্তিই শেষ পর্যন্ত একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা কাঠামো।

 

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

পুলিশ নিয়োগে আসছে পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উচ্চাভিলাষী, অতিমাত্রায় অপেশাদার পুলিশ সদস্যদের বিধিবহির্ভূত বলপ্রয়োগের কারণে ভেঙে পড়া পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশে

ঢাকার বিক্ষোভের সংবাদ ইসরায়েলি গণমাধ্যমে

অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন ফিলিস্তিনপ্রেমী লাখো জনতা। বাংলাদেশের এ কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ

‘সংবিধান মেনে গত ৫৪ বছরে কেউ দেশ পরিচালনা করেনি’

স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিক ঐকমত্যে জাতীয় সনদ তৈরি আশা ব্যক্ত করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, জাতীয় সনদে সবার অঙ্গীকারের জায়গায়

বিদ্যালয়ের স্ক্রিনে ভেসে উঠল, আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ লেখা ভেসে ওঠে। বুধবার (১ জানুয়ারি)। সন্ধ্যা

আরমান গেষ্ট হাউসে ভাংচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ শহরের আরমান গেষ্ট হাউসে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ইসমাইল হোসেন গংদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সাহাদত হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় একটি

তাড়াশে জায়গায় দখলে বাঁধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ ৫ জন আহত 

লুৎফর রহমান তাড়াশ: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দুলিশ্বর বাজারে অবস্থিত বিবদমান মূল্যবান ৮ শতক জায়গায় দখলে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় প্রতিপক্ষের হামলায় নারীসহ কমপক্ষে ৫ জন গুরুতর আহত