নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে কেউ পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন। অনেকে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। আয়না ঘরে আটকে রেখে মাসের পর মাস শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে অসংখ্য ব্যক্তিকে । কারো হাতের ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছে, শরীরে দেয়া হয়েছে ইলেকট্রিক শক। চোখ বাঁধা অবস্থায় পেশাব করতে গেলে বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকা বালতি এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাত-পা বেঁধে মুখের উপর গামছা দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি ঢালা হয়েছে। এতে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।
ছোট্ট একটি রুম-তার মধ্যে রয়েছে টয়লেট, সেই টয়লেটের ওপরেই পা রেখে দিনের পর দিন পার করতে হয়েছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের। গুমের শিকার অনেক নারীর নির্যাতনের মুখে পিরিয়ড হয়ে গেলে উপহাস করেছে কর্মকর্তারা।,
এভাবেই গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে অসংখ্য ভুক্তভোগী।
বুধবার রাতে গুমের স্বীকার ব্যক্তিদের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনার তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি।
কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এম খালিদ বিন জামান যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এটি ইতিহাস, অনুসন্ধান ও ন্যায়বিচারের পথে এক প্রামাণ্য দলিল বলে মনে করছেন গুম সংক্রান্ত কমিশন।
তথ্যচিত্রটিতে দেখা গেছে, গুমের শিকার অনেককেই তুলে দেওয়া হয় ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। তাদের কেউ কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে কারা ভোগ করেছেন। এছাড়া ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া অনেকে বেঁচে আছেন না মারা গেছেন- তা এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি সংক্রান্ত কমিশন।,
তথ্যচিত্রে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এক ভুক্তভোগী অঝোরে কেঁদেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার ওপর চালানো নির্যাতনের একপর্যায়ে হাতের ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়।
এছাড়া নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা এক শিশুকে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির উদ্যোগে উদ্ধারের ঘটনারও বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জঙ্গি সাজানো হতো। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার পর গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা নিখোঁজের জিডি করতে বাধ্য হন। থানা পুলিশ গুম বা অপহরণের মামলা নেয়নি। গুম কমিশনের অনুসন্ধান চলাকালে এমন অভিযোগ করেছেন বেশিরভাগ ভুক্তভোগীর স্বজনরা।
তথ্যচিত্রটিতে কমিশন কীভাবে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে এবং সত্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে গোপন বন্দীশালা আবিষ্কার, নষ্টপ্রায় প্রমাণ সংগ্রহ এবং তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি, যা একটি দায়িত্বশীল ও মানবিক রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি। কমিশন পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং নিখোঁজদের পরিণতি নির্ণয়ে নিরবচ্ছিন্ন অনুসন্ধান পরিচালনা করেছে। একইসঙ্গে গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য ‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ ইস্যুর সুপারিশ এবং সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আইনের সংশোধনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর বিষয়ে নীতিগত পরামর্শ প্রদান করেছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কমিশন দুইটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে।,
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.