
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার পূর্ব বাচোর গ্রামের এক অসহায় সনাতনী দম্পতি তাদের নয় দিন বয়সী কন্যাসন্তানকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বসবাসের উপযুক্ত ঘর নেই, নেই পর্যাপ্ত আয়। সংসারের ভার সামলাতে হিমশিম খাওয়া এই বাবা-মা তাদের নবজাতকের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
বাক্প্রতিবন্ধী শেফালী রানী ও দিনমজুর শুক্র বর্মণ বর্তমানে তিন কন্যাসন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ির একটি ছাপড়া ঘরে বাস করছেন। শুক্র বর্মণের আয়-রোজগার সীমিত, তাও অনিয়মিত। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। এর মধ্যে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর জন্য সিজার করাতে গিয়ে তাকে ঋণগ্রস্ত হতে হয়েছে।
শুক্র বর্মণ বাংলা এডিশনকে জানান, “আমি ও আমার স্ত্রী অসুস্থ। খড়কুটো দিয়ে বানানো একটি ছাপড়া ঘরে কোনো রকমে দিন পার করছি। প্রতিদিন কাজে যেতে পারি না। সংসার চালানোই দায়। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির জন্য ঔষধও ঠিকমতো কিনতে পারছি না। তাই দত্তকের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে কেউ যদি সাহায্য করেন, তাহলে আমি সন্তানকে নিজের কাছেই রাখতে চাই।”
এ বিষয়ে তিনি গ্রামের স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অনেশ চন্দ্র রায়ের শরণাপন্ন হন। অনেশ বলেন, “শুক্র বর্মণ আমার কাছে এসে তার সমস্যার কথা জানান। আমি পরিচিত একজনকে দিয়ে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করি, যাতে কোনো সহৃদয় ব্যক্তি পাশে দাঁড়ান।”
গত ১ আগস্ট শুক্রবার ‘ক্রিয়েশন অব হিমালয়’ নামের একটি ফেসবুক পেজে শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার জন্য একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সনাতনী ধর্মাবলম্বী কোনো নৈতিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম দম্পতি যারা শিশু পরিচর্যায় আগ্রহী ও অভিজ্ঞ, তারা আইনগত প্রক্রিয়ায় সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাণীশংকৈল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, “কোনো পরিবার যদি শিশুকে লালন-পালনে অক্ষম হয়, তাহলে সরকারি ‘শিশু পরিবার’ ও ‘ছোট মনি নিবাস’-এ শিশুদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে লালন-পালনের ব্যবস্থা রয়েছে।”
এই দম্পতির পাশে সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো একটি পরিবারের ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে এবং নবজাতকটিও বড় হতে পারবে নিজের পরিবারের ভালোবাসায়।