
নিজস্ব প্রতিবেদক: এ যেন দিনেদুপুরে ডাকাতি। সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ গরু-ছাগল দিয়ে কোটি টাকার ব্যবসা করছে মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো।’
দীর্ঘদিন ধরে গবাদিপশু নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে আসছে আলোচিত-সমালোচিত সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পশু আমদানি এবং বিক্রি করলেও সাদিক এগ্রোর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। বাংলাদেশে গবাদি পশু নিয়ে ব্যবসা করার আইন ও নীতিমালা রয়েছে। তবে, তা তোয়াক্কা না করেই অনেক খামারি গরু ও ছাগল উৎপাদন, প্রজনন, বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার অন্যতম উদাহরণ সাদিক অ্যাগ্রো।
সচেতন ভোক্তাদের ভাষ্যমতে, সাদিক অ্যাগ্রো গবাদি পশুর বাজারে যা করছে তাকে কোনভাবেই ব্যবসা বলা যায় না। তারা ঈদুল আজহার এক দুই মাস আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখতে সুন্দর গরু ছাগল কিনে আনে। সেগুলো মোটাতাজা করার জন্য নানা ধরনের হরমোন পুশ করে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৌশলি কথাবার্তা বলে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে।
সাদিক অ্যাগ্রোর অবস্থান মোহাম্মদপুর সংলগ্ন বসিলার বেড়িবাঁধ এলাকায়। এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে কিছু জমি ভাড়া নিয়ে আর কিছু জমি দখল করে। সারা বছর সেখানে হাতেগুনা কয়েকটি গরু ছাগল থাকে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল ছাড়া অন্য কোন বিদেশি জাতের ছাগল নিয়ে ব্যবসা করতে সরকার কাউকে অনুমোদন দেয়নি। দেশে ব্রাহমা জাতের গরু বিক্রির জন্যও কেউ অনুমোদন নেয়নি বা কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ২০১৬ সালে কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে খামারিদের মাধ্যমে ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আমদানি করা ৩০টি ব্রাহমা জাতের গরু বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই ব্রাহমা জাতের গরুগুলো আমদানি নিষিদ্ধ হলেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে আনা হচ্ছিল। আটক করা ব্রাহমা গরুগুলোকে আনা হচ্ছিলো ফ্রিজিয়ান জাত বলে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিঠি জালিয়াতির মাধ্যমে গরুগুলো আনার অপচেষ্টা চালায় সাদিক অ্যাগ্রো। আইন বহির্ভূতভাবে আমদানি করার কারণে ব্রাহমা জাতের গরুগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরে কৌশলে নিলামে তুলে গরুগুলো আবার কিনে নেয় সাদিক অ্যাগ্রো। নিলামে বিক্রি হওয়া গরুগুলো জবাই করে মাংস ঈদুল ফিতরের সময় সুলভ মূল্যে বিক্রির কথা থাকলেও তা করেনি সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন।’
অভিযোগ উঠেছে খানদানি ছাগল (বিটল জাত’), উচ্চ বংশীয় গরু, এই গরুর বাবা, দাদা, দাদার বাবার পরিচয় আছে-এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে প্রতারণা করে আসছে সাদিক অ্যাগ্রো। এবার তারা তিনটি ব্রাহমা জাতের গরু ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এগুলোর মধ্যে ১৪০০ কেজি ওজনের একটি গরু বিক্রি হয়েছে এক কোটি টাকায়। এর অর্থ প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়েছে অন্তত ৭০০০ টাকা।
এদিকে, এবারের কোরবানির ঈদে সাদিক এগ্রোর কর্ণধার ইমরান পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা বিটল প্রজাতির একটি ছাগলের দাম হাকান ১৫ লাখ টাকা। রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান এর ছেলে ইফাত সেই ছাগল কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লে, দেশে রীতিমত লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যায়। ছাগলকাণ্ডে দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি আমলা মতিউর রহমানের পরিবারের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। কিন্তু ছাগলের আকাশচুম্বী দাম হাকানো সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও গরু ছাগলের উচ্চমূল্য নিয়ে সমালোচনা চলছে। কোনো কোনো খামারি গরু-ছাগলের বংশ মর্যাদার অজুহাত দিচ্ছেন। এমন উচ্চ বংশের পশু কিনতে উচ্চ শ্রেণির মানুষই বেশি আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। নিজেদের প্রতিপত্তি দেখাতেই তারা এত দাম দিয়ে গরু কিনছেন বলে অভিযোগ রয়েছে’। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খামারিরাও চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন। যার প্রভাব সাধারণ ক্রেতাদের ঘাড়েই পড়ছে বলে অভিযোগ নেটিজেনদের।
সাদিক অ্যাগ্রোর বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, মাংসের এ ধরনের অস্বাভাবিক দাম সাধারণ বাজারে প্রভাব ফেলে। এতে গরুর দাম অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কোটি টাকা একটি গরুর দাম হতে পারে। তবে তা কোনোদিনই মাংসের গরুর জন্য হতে পারে না। যদি সেই গরুটি প্রজননের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাহলেই শুধু কোটি টাকা হতে পারে দাম। কিন্তু এর উদাহরণও পৃথিবীতে বিরল।’
এদিকে সাদিক অ্যাগ্রোর এ ধরনের কর্মকাণ্ড গরুর মাংসের দাম বাড়ার জন্য একভাবে দায়ী বলে অভিযোগ করছেন ঢাকা শহরের মাংস ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন এর বক্তব্য, ‘আমাদের গবাদি পশুগুলো ছিল উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের জন্য। সাধারণ ক্রেতাদের ওপর এর কোন প্রভাব পড়বে না।’