
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আবদুল মোমেন প্রথম দাবি করেছিলেন, বিদেশে রাজনীতিবিদের চেয়ে আমলাদের সম্পদের পরিমাণ বেশি। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আগে আমরা মনে করতাম কানাডার বেগম পাড়ায় বোধ হয় রাজনীতিবিদদের বাড়িঘর বেশি। এ নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করলাম এবং অনুসন্ধান করে দেখা গেল যে, আমলাদের বাড়িঘরই বেশি।’ এরপর আমলাদের বিদেশে সম্পদ নিয়ে রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়।
বেগমপাড়ায় কোন আমলার বাড়ি রয়েছে তার হিসেব জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু আমলাদের ব্যাপক প্রাধান্য এবং আধিপত্যের কারণে সে সময় এই তথ্যগুলো আর প্রকাশিত হয়নি। এমনকি হাইকোর্ট যখন জানতে চেয়েছিল যে, বেগমপাড়ায় আমলাদের কার কী সম্পদ রয়েছে তার ডিও দাখিল করা হোক৷ তারপরেও এই তথ্যগুলো প্রকাশ করা হয়নি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন যে, তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেটি পরবর্তীতে ব্যাহত হয়। শুধু কানাডার বেগমপাড়ায় নয়, বিভিন্ন দেশে সাবেক সচিব এবং আমলাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বেনজীর আহমেদ, ড. মতিউর রহমানের দুর্নীতি কেচ্ছা কাহিনী প্রকাশিত হবার পর আমলাদের দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে এখন ব্যাপক চর্চা হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারের উপর একটি চাপ রয়েছে৷ আর এ কারণেই বিদেশে যে সমস্ত আমলারা বিপুল সম্পদ বানিয়েছেন, তাদের তথ্যগুলো হালনাগাদ করা হচ্ছে এবং এই তথ্যগুলো সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তবে এ ধরনের অবৈধ সম্পদের হিসেব প্রকাশ করা হবে কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালে যখন আমলাদের সম্পদের হিসেব গ্রহণ করা হয়েছিল তখন একাধিক অবসরে যাওয়া সচিব এবং আমলাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্যাদি প্রকাশিত হয়েছিল। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী সচিব যারা অবসরে গেছেন তাদের বিপুল বিত্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল বলে জানা যায়।
তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হল যে, বেগমপাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে আমলাদের অবৈধ সম্পদ এই আমলে নয় অতীতেও এটি দেখা গেছে। এবং বিভিন্ন সময় আমলারা অবসরের পর বিদেশে তাদের সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এরশাদের আমলে প্রভাবশালী হয়ে যাওয়া বেশ কিছু আমলার যুক্তরাষ্ট্রে এবং কানাডায় বাড়িঘর রয়েছে। বাড়িঘর রয়েছে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার।
অন্যদিকে, বর্তমান সরকার টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতা রয়েছে। এই সময়ে যে সমস্ত আমলারা ক্ষমতাবান ছিলেন, তাদের অনেকেই স্থায়ী হয়েছেন কানাডায় বা যুক্তরাষ্ট্রে অথবা যুক্তরাজ্যে। এসব জায়গায় তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।’
আমলাদের সন্তানদের অনেক বড় একটি অংশ এখন বিদেশে লেখাপড়া করে। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে যে, কারা অর্থ দিয়ে সন্তানদের বিদেশে পড়ায়, কাদের সন্তান মেধার কারণে বৃত্তি নিয়ে দেশে যায়। অনেক আমলাদের বিদেশে সম্পদেরও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে সব কিছুকে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তদন্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
জনপ্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলে তারা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মনে করে যে, বিদেশে আমলাদের বাড়িঘর থাকা মানেই যে তারা দুর্নীতিগ্ৰস্ত হয়েছেন এমন কোন কথা না। অনেকে বৈধ পথেও বিদেশে সম্পদ করতে পারেন, সেটি তদন্ত করলেই বোঝা যাবে। তবে আগে বিদেশে কার কি সম্পদ রয়েছে সেটি উদ্ধার করার প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সকলে।’