শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস দায়ীত্ব গ্রহণের পর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ১ম ও ২য় পর্যায়ের টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ১৮৭টি প্রকল্প শেষের পথে। ইতোমধ্যেই এ সব প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাঁকী কাজ চলতি সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে। এরমধ্যে ১৫৭টি গ্রামীণ মাটির কাঁচা ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত/পূর্ণঃনির্মাণ, ৩১টি মাঠ, মসজিদ-মাদ্রাসা সংস্কার ও উন্নয় কাজ। এরমধ্যে টিআর (টেস্ট রিলিফ) প্রকল্পের আওতায় ৯৫টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় মোট ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪ টাকা। কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পের আওতায় ১৮টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ মোট ১৫৪ দশমিক ২৯২৭ মেট্রিকটন গম।
কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্পের আওতায় ১৮টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ মোট ১৫৪ দশমিক ২৯২৭ মেট্রিকটন চাল। কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা)' প্রকল্পের আওতায় ৫৬টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় মোট ২ কোটি ১৬ লাখ ৯৭৫ টাকা। দূর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে এ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যবৃন্দ। এ কাজ শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সংশ্লিষ্ট সদস্যগণ পৃথক বা দলগত ভাবে সার্বক্ষণিক প্রকল্প এলাকায় সশরীরে উপস্থিত থেকে কাজের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করছেন। এ সব প্রকল্পের সার্বিক তত্বাবধায়নে রয়েছেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান। শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: আল আমিন জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস দায়ীত্ব গ্রহণের পর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ বছরের বরাদ্দ বিগত বছর গুলির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। উন্নয়ন কাজও হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। এ বছর জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরেজমিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকা পরিদর্শন ও কঠোর তদারকিতে শতভাগ কাজ করা হচ্ছে।
যা বিগত আওয়ামী সরকার আমলে হয়নি। এ সবই সম্ভব হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দূর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক-ই-আজমের ঐকান্তিক সদিচ্ছয়। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো: আব্দুল বাছেদেরসঠিক দিক নির্দেশরা ও পরামর্শে এবং শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামানের সশরীরে সরেজমিনে তত্বাবধায়ন ও ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণকে সাথে নিয়ে রাতদিন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শতভাগ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। যা বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার আমলে দূর্ণীতিবাজ এমপি, মন্ত্রী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ ও চাপের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শতভাগ কাজ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ বছর তাদের সে সব উৎপাত ও অন্যায় প্রেসার না থাকায় এতো ভালো ভাবে কাজ করা সম্ভব হয়েছে।'
পোরজনা ইউনিয়নের বড় বাচড়া নতুনপাড়া গ্রামের মুক্তির বাড়ি হতে কেসমতের জমি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজের জন্য কাবিখা প্রকল্পের আওয়ায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ দশমিক ২৯২৭ মেট্রিকটন গম। সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা বড় বাচড়া নতুনপাড়া গ্রামের নব সংস্কারকৃত রাস্তা পরিদর্শন করে ও এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার আমলে এ রাস্তায় উল্লেখযোগ্য হারে চোখে পড়ার মত কোন কাজ করা হয় নাই। খানাখন্দে ভরা ছিল। ভ্যান ট্রলি চলাচল করতে পারতো না। এখানকার উৎপাদিত ফসল মাথায় করে পরিবহণ করা ছাড়া বিকল্প উপায় ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস দায়ীত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকার আমলে এ বছর ভ্যান ট্রলিতে ফসল পরিমহণের সুবিধা হয়েছে। কৃষকের বাড়তি শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে কৃষকরা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। এতে তারা খুব খুশি এ সরকার আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক তারা তাই চায়।
পোরজনা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মো: আবুল হাসেম বলেন, আমার ইউনিয়নের দায়ীত্ব প্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও শাহজাদপুর উপজেলা প্রণি সম্পদ কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন সহ সকল সদস্য শতভাগ কাজ ভালো ভাবে করতে প্রতিটি প্রকল্প এলাকা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি।'
এ বিষয়ে পোরজনা ইউনিয়নের বড় বাঁচড়া নতুনপাড়া গ্রামের হামিদা খাতুন ও মুল্লুক চান বলেন, আগে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ মণ ওজনের সেচযন্ত্র স্থাপনের জন্য নিতে ৪/৫ জন শ্রমিক ভাড়া করতে হোত। তারা বাঁশ ও রশি বেধে ঘাড়ে করে বহণ করতো। ৪/৫ জন শ্রমিক বাবদ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাগতো। দূরত্ব বেশি হলে খরচও বেড়ে যেতো। এখন এই রাস্তা হওয়ায় এ খরচ বেচে যাচ্ছে কৃষকদের। মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকায় খুব সহজে ভ্যান বা ট্রলিতে করে জমিতে সেচযন্ত্র পরিবহণ করা যাচ্ছে। এতে কৃষকের সময় ও শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হয়ে লাভ বেশি হচ্ছে।
অপরদিকে নরিনা ইউনিয়নের নরিনা দক্ষিণপাড়া পাকা সড়কের ব্রীজ থেকে আলো মিয়ার জমি পর্যন্ত মাটির কাঁচা রাস্তার পূণঃনির্মাণ কাজের জন্য কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৭০০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাশের ক্যানেল ও জমির পাশে থেকে মাটি কেটে প্রায় আড়াই থেকে ৩ ফুট উচু ও প্রসস্ত ও সমান করে মসৃন করা হয়েছে। ফলে এ নতুন তৈরী মসৃন রাস্তা দিয়ে দু‘টি ভ্যান পাশাপাশি চলতে পারবে। ফলে সেচযন্ত্র ও ফসল খুব সহজে অল্প খরচে পরিবহণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বদলে সাশ্রয় হচ্ছে। এতে কৃষকরা অত্যন্ত খুশি।
এ বিষয়ে নরিনা ইউনিয়নের নরিনা দক্ষিণপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, নরিনা দক্ষিণপাড়া হতে মাউথপুর সাম পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় মাটি ভরাট, মেরামত ও সংস্কার কাজ অত্যন্ত ভালো হয়েছে। আগে এই রাস্তা দিয়ে কোনো ভ্যান-ট্রলি চলাচল করতে পারতো না। প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমির ফসল ও ভারি বোঝা মাথায় নিয়ে যাতায়াত করতে হোত। এখন এখানকার সমস্ত ফসল ভ্যান-ট্রলি খুব সহজে চলাচল করতে পারে। ফলে কামলা ও শ্রমিকের খরচ কমে গেছে। খুব সহজে জমির ফসল কেটে জমিতেই মাড়াই ও শুকানোর কাজ শেষ করে ভ্যান-ট্রলিতে করে বাড়ি ও হাট বাজারে নিতে পারি। শ্রমিক খরচ কমে যাওয়ার কারণে এখানকার কৃষকরা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে।' তিনি আরও বলেন আগের সরকার আমলে কাগজ কলমে শত ভাগ কাজ সম্পন্ন দেখানো হোত, সরেজমিনে এক ছটাকও কাজ করা হোত না। এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে দলীয় নেতা, পাতি নেতা, ছাও নেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের লোকজন ও চেয়ারম্যান-মেম্বররা সব মেরে খেতো। বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের লোকজন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করায়, এ বছর প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শতভাগ ভালো করা হয়েছে।
একই ভাবে টিআর (টেস্ট রিলিফ) প্রকল্পের আওতায় নরিনা ইউনিয়নের নারানদহ মজিদের বাড়ি হতে কবরস্থান পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার করার জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নারায়ণদহ ঈদগাহ মাঠে মাটি ভরাট বাবদ ৩ লাখ টাকা ও নারায়ণদহ নতুনের জমি হতে পান্নার জমি পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার বাবদ বরাদ্দ ৩ লাখ টাকা। নারায়ণদহ দক্ষিণপাড়া ব্রীজ হতে করিমের বাড়ি পর্যন্ত কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের আওতায় রাস্তা পূণঃনির্মাণ বাবদ বরাদ্দ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ সব প্রকল্পের কাজ শতভাগ করা হয়েছে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন। ওই এলাকার আব্দুল মজিদ মুন্সি ও নাজিম প্রামানিক বলেন, এ সকল প্রকল্পে শতভাগ কাজ, ফসল পরিবহণ সহজ, শ্রমিক খরচ সাশ্রয় ও চলাচল উপযোগি হওয়ায় তারা খুবই খুশি বলে জানিয়েছেন।
এ সব প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সন্তষজনক হয়েছে। এ কাজে এলাকাবাসি আমার কাছে খুশি ও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আর যে সকল প্রকল্পে ৯০ ভাগ ভালো হয়েছে আর ১০ ভাগ খারাপ আছে তা এ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে ফাইনাল রিপোর্ট দিতে মৌখিক ভাবে বলেছি ও চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তারা এ সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করে রিপোর্ট না দিলে ও রিপোর্ট দিলেও আমি সরেজমিনে আবারও গিয়ে দেখে শতভাগ সন্তোষজনক কাজ সম্পন্ন না পেলে সে যেই হোক সোজা তার বিরুদ্ধে মামলা করে প্রকল্পের পুরো টাকা ফেরত নেওয়া হবে ও আইনানুগ ভাবে তাকে সাজা ভোগ করতে হবে।