নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত চক্রের ‘গুরু’ ছিলেন চাকরিচ্যুত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। তিনি না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল তাঁর কয়েক শিষ্য। তাদের মধ্যে অন্যতম পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমানকে নিয়ে প্রশ্নপত্র সংগ্রহের পর তিনি দিতেন গুরুকে।
গত ১২ বছরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আওতাধীন ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার নিয়োগের অন্তত ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ প্রমাণ করতে গিয়ে সিআইডি প্রশ্নফাসেঁর প্রমাণ পায়। সিআইডি সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যদের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন থেকে প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া মিলেছে বেশ কিছু ডিজিটাল আলামত। তাদের কাছ থেকে দুটি বিসিএস পরীক্ষার শত শত প্রবেশপত্রের ফটোকপি পাওয়া গেছে। তবে কোন দুটি বিসিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র এ বিষয়ে কিছু জানায়নি সিআইডি।’
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এক যুগ ধরে চক্রটি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছে। এর সঙ্গে বিজি প্রেসকেন্দ্রিক একটি দল জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে দেওয়া হতো না; বরং পরীক্ষার আগের রাতে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের নেওয়া হতো গোপন আস্তানায়।
পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অভিযোগে রোববার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি’) তাদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর, উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মী মামুনুর রশীদ, ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ও তাঁর ভাই সায়েম হোসেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র লিটন সরকার, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাকর্মী শাহাদাত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান ও আবেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।’
গ্রেপ্তার ১৭ জন দুটি গ্রুপে কাজ করতেন। চুক্তি অনুযায়ী একজন প্রার্থীর কাছ থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে তারা এক থেকে দুই লাখ টাকা নিতেন। একইভাবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার আগে এক থেকে দুই লাখ টাকা দিতে হতো। নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে গেলে দিতে হতো বাকি টাকা। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা নিতেন তারা। আর বিসিএসের জন্য চুক্তি হতো ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকায়।
সিআইডি জানায়, পরীক্ষার্থীদের নিজস্ব ইউজার আইডি ও গোপনীয় পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করতেন চক্রের সদস্যরা। ফলে পরীক্ষার ফল বের হলে তারা সহজেই জেনে যেতেন কে কে পাস করেছে। এতে তাদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী বাকি টাকা আদায় সহজ হতো।
সিআইডির মামলা
গ্রেপ্তার ১৭ জনসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গতকাল রাজধানীর পল্টন থানায় সরকারি কর্ম কমিশন আইনে মামলা করে সিআইডি। পলাতক আসামিরা হলেন- পিএসসির সাবেক পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বণিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান,গোলাম হামিদুর রহমান, মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এ টি এম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, মো. আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে আরও ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদনে পিএসসির বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত হিসেবে এই চক্রের কথা বলা হয়।’