নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শিকলে বেঁধে রেখে ২৫ দিন ধরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী। নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসায় তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী। এর আগে তরুণীর চিৎকারে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে এক ব্যক্তি কল করলে পুলিশ তরুণীকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঁইয়া।
মামলায় আসামি করা হয়েছে তিন যুবক ও এক নারীকে। তারা হলো সান (২৬), হিমেল (২৭), রকি (২৯) ও সালমা ওরফে ঝুমুর। গতকাল রোববার রাতে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের এক কর্মকর্তা। এজাহারের বাইরেও আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
গত ৫ মার্চ দুপুর থেকে নবীনগরে আসামি ঝুমুরের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে আটকে রাখা হয়েছিল বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার তরুণী। এতে বলা হয়, বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকছিলেন। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে ওই যুবকের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। একপর্যায়ে বোনের বাসা ছেড়ে ঝুমুরের সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন তিনি। পরে ঝুমুরের মাধ্যমে সান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নবীনগরের ওই বাসায় ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধর্ষণ করে সান। বিয়ের কথা বলে ২৭ ফেব্রুয়ারি ফের ধর্ষণ করে। বিয়ের জন্য সানকে চাপ দিলে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সানের মাধ্যমেই তার বন্ধু হিমেল ও রকির সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ মার্চ দুপুরে দুই বন্ধু হিমেল ও রকিকে নিয়ে ওই বাসায় এসে সান তাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে চোখ বন্ধ করতে বলে। ঝুমুর এ সময় খাবার আনার কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সানের কথায় চোখ বন্ধ করলে তারা তিনজন মিলে তরুণীর হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। পরে ঝুমুরের কথায় হিমেলকে পাহারায় রেখে অন্যরা শিকল আনার জন্য বাইরে চলে যায়। এ সময় একা পেয়ে হিমেল তাকে ধর্ষণ করে।
ওইদিন কিছুক্ষণ পর শিকল নিয়ে বাসায় ফিরে আসে সান, রকি ও ঝুমুর। শিকল দিয়ে তরুণীর হাত ও পা বেঁধে রাখা হয়। নিয়ে যায় তার মোবাইল ফোন। পরদিন ৭ মার্চ রাতে রকি তরুণীকে ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের শিকার তরুণী জানান, খাবার এবং বাথরুমে যাওয়ার সময় বাসায় থাকা ঝুমুর শুধু হাতের শিকল খুলে দিত। কিন্তু পায়ে শিকল পরানো থাকত। ৮ মার্চ দুপুরে ওই বাসায় আসে হিমেল ও সান। তারা এসে ফোনে তার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে।
ভুক্তভোগী তরুণী আরও জানান, ৩০ মার্চ রাতে বাসায় কেউ না থাকায় জানালা দিয়ে চিৎকার করতে থাকেন। একজন অজ্ঞাত পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে কল করলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।’