ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: বাচ্চা প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় আয়হীন স্বামীকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে আসেন লাবণী আক্তার (২২) পূর্বপরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হন নগরীর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। সিজারে সেখানে তাঁর কোলে আসে ফুটফুটে ছেলেসন্তান। হাসি ফোটে তাঁর মুখে। কিন্তু সেই হাসি মলিন হতেও বেশি সময় লাগেনি।
বিল পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতালের পরিচালক সেই সন্তানকে বিক্রি করে দেন। এমনি ঘটনা ঘটেছে রংপুর নগরীর বাসটার্মিনাল এলাকার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে।
পুলিশ এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক, নবজাতক কেনা দম্পতিকে আটক করেছে। উদ্ধার করে নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রোববার বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন। এ সময় নবজাতক ও তার মা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানান, রংপুর সদরের বুড়ারঘাট এলাকার লাবণী আক্তারের স্বামীর আয়ের কোনো উৎস নেই। কয়েক দিন আগে তাঁরা বাচ্চা প্রসবের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রংপুরে আসেন। ১৩ জানুয়ারি নগরীর হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ২০২ নম্বর রুমে প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হন। ওই দিন দিবাগত রাত ১টার দিকে সিজারের মাধ্যমে তাঁর ছেলেসন্তান হয়। এরপর সেখানে আরও চার দিন চিকিৎসাসেবা নেন। চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পারায় ওই প্রসূতিতে একপর্যায়ে নবজাতককে বিক্রির জন্য চাপ দেওয়া হয়। এতে প্রসূতি অস্বীকৃতি জানান।
এরপর ১৭ জানুয়ারি হাসপাতালের বিল পরিশোধে ব্যর্থতার অজুহাত এবং অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের পরিচালক এম এস রনি মিয়া (৫৮) ওই প্রসূতির অগোচরে তাঁর পূর্বপরিচিত পীরজাবাদ এলাকার দম্পতি জেরিনা আক্তার বীথি ও রুবেল হোসেন রতনের কাছে প্রসূতির স্বামী ওয়াসিম আকরামের সহায়তায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
এ ঘটনায় প্রসূতি লাবণী আক্তার গতকাল শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় আজ রোববার অভিযান চালিয়ে নগরীর পীরজাবাদ এলাকা থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।
একই সঙ্গে নবজাতক ক্রয়কারী পীরজাবাদ এলাকার রুবেল হোসেন রতন, তাঁর স্ত্রী জেরিনা আক্তার বীথি ও হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক কামারপাড়া বাবু খাঁ এলাকার এম এস রনিকে আটক করে পুলিশ।’
সংবাদ সম্মেলনে লাবণী আক্তার বলেন, ‘আমার মা-বাবা নেই। সৎঘরে মানুষ হইছি। ঢাকায় চাকরি করতাম। রনি আংকেলকে আমি আগে থেকে চিনি। ঢাকা থেকে রংপুরে এসে দেউতি বাজারে ভাড়া থাকতাম। রনি আংকেলকে আমার বাচ্চা প্রসবের সময়ের কথা বলি। তখন উনি উনার হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। তখন আমি উনাকে বলি প্রসব বেদনা উঠছে, আমার কাছে তো টাকাপয়সা নাই। কোনো সমস্যা হবে কি। তখন রনি আংকেল বলেন, কোনো সমস্যা নাই তুমি আস। টাকাপয়সা লাগবে না, পরে দেখা যাবে। ওনার ওখানে গেইছি সিজার হওয়ার জন্য। ৯০০ টাকা জমাও দিছি আমি। সিজারের তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু অনেক জায়গায় আমার স্বামী টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করেও পাইনি।’
লাবণী আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা আরও দুদিন সময় চাইছি। কিন্তু বাচ্চাটা বিক্রির জন্য রনি আংকেল প্রস্তাব দিছে। বাচ্চাটা আমার কাছ থেকে বারবার চাইছে। অনেক কান্নাকাটি করছি, দেখে উনি বলেন মায়াকান্না দেখায় লাভ নাই, টাকা দাও নাই বাচ্চা বিক্রি করো। আমার স্বামী কিডনি দিতে চাইছে, কিন্তু ওরা নেয় নাই। আমার দুইটা চোখ নিতে বলছি, রক্ত নিতে বলছি। কিন্তু উনি আমাদের কোনো কিছু শোনেনি। আমার বাচ্চাটাকে চুপ করে নিয়ে বিক্রি করে দিছে।’