জেমস আব্দুর রহিম রানা: যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় বিগত কয়েক বছর ধরে শীতকালীন সবজি মটরশুঁটি চাষ বেড়েছে। আগাম মটরশুঁটি চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। স্বল্পপুঁজি এবং অল্প শ্রমে লাভবান হওয়া যায় বলে মটরশুঁটি চাষে ঝুঁকছেন মণিরামপুরের কৃষকরা। এতে সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। বীজ রোপণের ৬৫ দিনের মাথায় ও গাছে ফুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন পরই মটরশুঁটি জমি থেকে তোলা শুরু হয়। সার ও কীটনাশক ছাড়াই মটরশুঁটি চাষ করা হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মণিরামপুরে অন্তত ২০০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটির চাষ করা হয়েছে। গত মৌসুমে ১৫ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি চাষ হয়েছিল।
এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা প্রতিদিন প্রতি কেজি ২০ টাকা করে ১০ থেকে ১৫ কেজি মটরশুঁটি তুলে দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এতে সংসারে আসছে বাড়তি আয়। জনপ্রিয় এ মটরশুঁটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে তিন থেকে চারবার মটরশুঁটি তোলা যায়। জমি থেকে মটরশুঁটি সংগ্রহ করে সরাসরি বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন কৃষক।
অধিদপ্তর জানায়, এক বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয় মটরশুঁটি চাষে। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ মণ মটরশুঁটি পাওয়া যায়। সব খরচ বাদে এক বিঘা জমি থেকে কৃষক আয় করেন অন্তত ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। মটরশুঁটি চাষ করে কৃষক যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দেশে মটরশুঁটির উৎপাদন বাড়ছে।
অন্যদিকে গ্রামের গৃহিণী ও স্কুল-কলেজের পড়ুয়া শিক্ষার্থীও মটরশুঁটি থেকে টাকা উপার্জন করছে। এতে সংসারে আসছে বাড়তি আয়।
উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের গৃহিণী ফাতিমা খাতুন বলেন, মটরশুঁটি তুলে যে টাকা পাই, তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচটা হয়।
একই গ্রামের জোহরা বেগম বলেন, সংসারের কাজ শেষ করে বিকেলে মটরশুঁটি তুলতে যাই। এতে সংসারে বাড়তি টাকা আসে, তা দিয়ে সংসারের ছোটখাটো চাহিদা মেটাতে পারি।
উপজেলার খাটুরা গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, একসময় জমিতে অন্য ফসল চাষ করতাম। খরচ বাদে তেমন লাভ থাকত না। এখন মটরশুঁটি চাষ করে বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা যায়। পাশাপাশি মটরশুঁটির গাছ গবাদি পশুর খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে মটরশুঁটি চাষ করেছি। ফলন ভালোই হয়েছে। এবার দামও ভালো, আশা করছি লাভবান হব।’
উপসহকারী কৃষি অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, মটরশুঁটি চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকরা এটি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে খাটুরা-এনায়েতপুর মাঠে অন্তত ২০০ বিঘা জমিতে মটরের আবাদ হয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার অজয় কুমার বিশ্বাস বলেন, শুধু স্বাদেই অতুলনীয় নয়, মটরশুঁটির রয়েছে অগণিত ভেষজ গুণ, যা বহু জটিল রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে কম শ্রমে, কম খরচে মটরশুঁটি চাষ করা যায় বলে এতে লাভও বেশি হওয়ায় অত্র উপজেলায় দিন দিন মটরশুঁটি চাষে ব্যাপকতা লাভ করছে।’