এম দুলাল উদ্দিন আহমেদ, সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জে তথ্য জালিয়াতি করে পোস্ট অফিসে চাকরি গ্রহণ করার চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। জানা গেছে- আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে সংরক্ষিত কোটার জেলার বাসিন্দাদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের মৃত্যু ইসহাক আলীর ছেলে আবুল কালাম আজাদ এর বাবা-মা’র নাম ঠিক রেখে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নয়াপাড়া পোস্ট অফিসের আওতাধীন শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের অন্তর্গত শিমুলবাড়ি গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি দিয়েছেন। কোটা জালিয়াতিকারী এই আবুল কালাম আজাদ বর্তমান সিরাজগঞ্জ বাজারের মুড়িপট্রি সাবপোস্ট অফিসে সাব পোস্ট মাস্টার পদে চাকরি করছেন। এই চাকরি গ্রহনের সময় পোস্ট অফিসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সিরাজগঞ্জ জেলা কোটা শুন্য না থাকায় তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম এর নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ সুকৌশলে কুড়িগ্রাম জেলার উল্লেখিত ঠিকানা ব্যবহার করে ও সংশ্লিষ্ট ঠিকানাধীন শিমুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র ও চারিত্রিক নাগরিক সনদ নিয়ে বিগত ২০০১ সালে পোস্ট অফিসে চাকরি গ্রহণ করেন এবং জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পোস্ট অফিসে তার স্বীয় কাজে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সেখান থেকে বদলী হয়ে বর্তমানে সিরাজগঞ্জ বাজার সাবপোস্ট অফিসে সাবপোস্ট মাস্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায় তিনি নিজে বংশানুক্রমে সক্রিয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও তার ছোটভাই রাজু কাজিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে সে সময় তথ্য গোপন করার সহায়তা প্রদানসহ চাকরির সকল বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম। এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও আওয়ামী লীগের এ প্রেতাত্মারা সরকারি অফিসকে তটস্থ করে রেখেছেন। এদের দাপটে সেবা নিতে আসা লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তথ্য গোপন করে পোস্ট অফিসে চাকরি নেওয়া সেই আবুল কালাম এখনও কিভাবে চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তা ভাবিয়ে তুলছে সিরাজগঞ্জবাসীকে।
তথ্য গোপন করে চাকরি গ্রহনকারী আবুল কালাম আজাদ জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার কোটা শুন্য না থাকায় তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ নাসিম আমাকে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর কাছে পাঠান। পরে ওই চেয়ারম্যান মন্ত্রীর নির্দেশক্রমে শিমুলবাড়ি গ্রামকে আমার স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়ে আমাকে একটি প্রত্যায়নপত্র ও একটি চারিত্রিক নাগরিক সনদপত্র দেন। পরে ওই কাগজপত্র এনে মন্ত্রীর পিএস এর নিকট জমা দেওয়ার পর মন্ত্রী আমাকে কুড়িগ্রাম জেলার কোটায় চাকরি দিয়েছেন। তবে এভাবে ওই সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অন্য জেলার কোটায় আমার মতো আরো ৪৯জনকে চাকরি দিয়েছেন। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ প্রধান পোস্ট অফিসে দুলাল, কামরুজ্জামান সোহেল,
মাসুদ রানা মন্ডল ও গোলবার হোসেন অনন্ত ও ঢাকা এয়ারপোর্ট পোস্ট অফিসে
রফিকুল ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন পোস্ট অফিসে ৪৯জন কর্মরত রয়েছেন। তথ্যানুসন্ধানে আরো জানাযায়,চাকরি নীতিমালা ভঙ্গ পুর্বক তথ্য গোপন করে চাকরি গ্রহণকারী আবুল কালাম আজাদ এর দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। নিজ জেলার তথ্য গোপন করে অন্য জেলার কোটায় সরকারি চাকরি গ্রহন এবং সেই জেলার প্রার্থীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক’কে তদন্ত পুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজ। এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা নাগরিক সমাজ এর সভাপতি এএইচএম মহিবুল্লাহ মহিব বলেন,তথ্য গোপন, জালিয়াতি ও তথ্য বিকৃত করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চাকরির শুরুতেই যারা অসততার আশ্রয় নেয়, তাদের অপরাধপ্রবণতা পরবর্তী সময়ে চাকরির ক্ষেত্রে বেশী দেখা দেয়। সরকারি চাকরিতে ঢোকার জন্য যিনি তথ্য গোপন বা বিকৃত করেছেন,যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এটা শুধু চাকরিবিধির প্রশ্ন নয়, বিষয়টি নৈতিকতার সঙ্গেও সম্পর্কিত। প্রতারণা করে চাকরি নেয়ার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বেতন ফেরত নেয়ারও উদাহরণ রয়েছে। সরকারি চাকরি মানে লোভনীয় পদ। এই চাকরির আকর্ষণে নিজের নীতিবোধ বিসর্জন দিয়ে অসত্য তথ্য ব্যবহার করে থাকে। চাকরি প্রার্থীদের এই দুর্নীতি চাকরি প্রদান প্রক্রিয়ার শুরুতেই উদ্ঘাটন করা সমীচীন ছিলো। তবে তথ্য গোপন করে চাকরিতে প্রবেশকারীর সব ধরনের ডকুমেন্ট কঠোরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা প্রয়োজন।’