নিজস্ব প্রতিবেদক: মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন যে দেশের তরুণরা সেই দেশের রাস্তাঘাটে, বিপণিবিতানে সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ড থেকে উধাও হতে চলেছে বাংলা ভাষা। সাইনবোর্ড-বিলবোর্ডে বাংলায় লেখার অনীহা এবং বাংলা বানানে ভুলের ছড়াছড়ি, সব মিলিয়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে ভাষা সংগ্রামীদের মধ্যে, তাদের মতে ভাষার জন্য সংগ্রাম এখনাে শেষ হয়নি।
বাংলা ভাষায় লেখার সাইনবোর্ড স্থাপনে এখনো অনেকেই উদাসীন। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে আদালতের নির্দেশনা। এখনো সর্বত্র দৃশ্যমান হচ্ছে বিদেশি ভাষার সাইনবোর্ড। বাণিজ্যিককেন্দ্র সহ সর্বত্র বিদেশি ভাষার প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি প্রচন্ড দৃষ্টিকটু’। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কিছু অভিযান দৃশ্যমান হলেও এখনও এ বিষয়ে রয়েছে উদাসীনতা।
যদিও দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেওয়া এক আদেশে বলা হয়, ‘সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেট, সব দফতরের নামফলক এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’
বিভিন্ন দোকানপাট, স্কুল-কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় দোকান বা প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড বা নামফলক স্থাপনের জন্য একটি শর্ত দেওয়া হয়। অনুমতি নেওয়ার সময়ই নামফলকে বাংলা ব্যবহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়। অতিরিক্ত একটি সিল দিয়ে ট্রেড লাইসেন্সে লেখা থাকে, ‘সাইনবোর্ড/ব্যানার বাংলায় লিখতে হবে।’ তবে বাস্তবে এসব আদেশ কতটুকু বাস্তবায়ন হয় তা ঘর থেকে বের হলেই দেখা যায়।
কোনো সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ডেই দেখা যায় না বাংলা ভাষার ব্যবহার। এমনকি ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন বিলবোর্ডগুলোও ডিজিটাল শোভা পায়। কিন্তু সেই ডিজিটাল বিলবোর্ডগুলোতেই ইংরেজির ছড়াছড়ি।’ বাংলা এসব জায়গায় চরমভাবে উপক্ষিত। উদাসীনতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ থেকে উত্তরণের জন্য গোটা ব্যবস্থারই পরিবর্তন দরকার। দরকার মানসিক ও সামাজিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।’