জেমস আব্দুর রহিম রানা: যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ৭ নম্বর খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জিন্নাহ হামলার শিকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে তাঁর ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত চেয়ারম্যানকে বহনকারী প্রাইভেটকার ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। তাঁর আগে মনোনয়ন জমা দিতে এসে উপজেলা চত্বরে লাঞ্ছিত হয়েছেন চেয়ারম্যানের বড় ভাই হজরত আলী।
জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান জিন্নাহ নৌকার প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন। নির্বাচনের দিন সকালে উপজেলার হেলাঞ্চি কৃষ্ণবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ইউপি চেয়ারম্যান জিন্নাহর ছোট ভাই হাবিবুর রহমান হাবি সেখানকার ইগল প্রতীকের কর্মী সাবেক ইউপি সদস্য সাধন কুমারসহ দুজনকে কুপিয়ে আহত করেন। সেই ঘটনার জেরে ইউপি চেয়ারম্যান জিন্নাহ উপজেলা পরিষদ চত্বরে হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জিন্নাহ বলেন, ‘আমি টানা দুই বার হেলাঞ্চি কৃষ্ণবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি। নতুন করে বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের তফসিল হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল হক। আমি আবারও সভাপতি নির্বাচন করার উদ্দেশে ৭ জন অভিভাবক সদস্যর নামে মনোনয়ন কিনেছি। আজ বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল।’
আবদুল আলীম জিন্নাহ বলেন, ‘দুপুরে আমার বড় ভাই হজরত আলীকে মনোনয়ন জমা দিতে উপজেলায় পাঠাই। সেখানে যুব উন্নয়ন দপ্তরের বাইকে কয়েকজন যুবক তাকে লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে মৌখিক অভিযোগ করে চলে আসেন বড় ভাই।’
ইউপি চেয়ারম্যান জিন্নাহ আরও বলেন, এরপর থানা-পুলিশকে জানিয়ে বিকেলে খেদাপাড়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে একটি প্রাইভেটকারে করে আমি উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার দপ্তরে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে যাই। পথিমধ্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ফটকের সামনে গেলে বেশ কয়েকজন যুবক আমার গাড়িতে হামলা করে। হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমরা ভেতর থেকে গাড়ির জানালা দরজা লক করে দিই। হামলাকারীরা জানালা ভেঙে আমাকে বের করার চেষ্টা করে। পরে কোনো রকমে আমি প্রাণে বেঁচে ফিরি।
ইউপি চেয়ারম্যান জিন্নাহ বলেন, ‘আমি উপজেলা চত্বরে ঢোকার আগে বাইরে থানা-পুলিশ উপস্থিত ছিল। হামলাকারীরা সংখ্যায় অনেক হওয়ায় পুলিশ তাদের রোধ করতে পারেনি। স্কুল ভোটের মনোনয়ন কেনার পর গত দুই দিন ধরে মনোনয়ন জমা না দিতে বিভিন্ন লোক মোবাইল ফোনে আমাকে হুমকি দিয়েছেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি নৌকার ভোট করেছিলাম। ভোটের মাঠে আমার ভাই ইগলের দুই কর্মীকে হামলা করেছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ওপর হামলা হয়েছে। যদিও সেই ঘটনা আমি কিছু জানতাম না।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেলাঞ্চি ভোট কেন্দ্রের বাইরে হামলার শিকার সেই সাবেক ইউপি সদস্য সাধন কুমার হেলাঞ্চি কৃষ্ণবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে নিজের পক্ষের ৫ জন অভিভাবক সদস্যর মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাধন কুমার বলেন, ‘জিন্নাহ চেয়ারম্যান একাধিকবার হেলাঞ্চি কৃষ্ণবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দুই ধাপে ৮টি নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়েছেন। কিন্তু স্কুলের উন্নয়নে তিনি কোনো কাজ করেননি। আমি এবার এলাকাবাসীর সমর্থন নিয়ে সভাপতি নির্বাচন করছি। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি ৫ জনের মনোনয়ন জমা দিয়েছি। তখন চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়ে কিছু শুনিনি। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অফিসের ভেতরে কিছু ঘটেনি।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল হক বলেন, বৃহস্পতিবার হেলাঞ্চি কৃষ্ণবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। কোনো প্রার্থীর লোক মনোনয়ন জমা দিতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন এমন কিছু শুনিনি।’
মনিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিকেলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটু ঝামেলা হয়েছিল। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।’
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জিন্নাহর ওপর হামলার বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন একটি অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা জানিয়ে সংযোগ কেটে দেন। এরপর তিনি আর মোবাইল ফোন ধরেননি।