নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে। এই প্রথম অধিবেশনে সংরক্ষিত নারী আসনে ৫০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। নির্বাচন কমিশন আগামী দু একদিনের মধ্যেই সংরক্ষিত আসনের জন্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। এই তফসিল ঘোষণা করার পরে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করবে।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা যে দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সেই দলের আসন অনুযায়ী আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়। সে হিসেবে ২২৪ টি আসন পাওয়া আওয়ামী লীগ এবার সংরক্ষিত আসনের জন্য ৩৭ জনকে নির্বাচিত করতে পারবে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি পারবে দুজনকে। আর গতকাল ৬২ জন সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত ক্ষমতা সংসদ নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর অর্পণ করেছেন। সেই হিসাবে ৫০ টি আসনের মধ্যে এবার ৪৮ টি আসনে নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ। এই ৪৮ আসনে সংরক্ষিত আসনের এমপি কে হবেন-এ নিয়ে নানা আলাপ আলোচনা এবং গুঞ্জন চলছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দফায় দফায় সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বা তিনি যাদের নিয়ে ভাবছেন তাদেরকে ডেকে পাঠাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, সংরক্ষিত আসনে যারা মনোনয়ন পেতে পারেন তাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় ৬০ থেকে ৭০ জন রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এই ৬০ থেকে ৭০ জনের মধ্যে ৪৮ জন নারী কোটায় সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সব রাজনীতিবিদদেরকে যে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন এমনটি নয়। রাজনীতিবিদ, শিল্প, সংস্কৃতি অঙ্গনে আলোচিত ব্যক্তিত্ব, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, কর্পোরেট জগতে কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে সংরক্ষিত আসনে জায়গা দিতে পারেন। সংরক্ষিত সংক্ষিপ্ত তালিকায় বিভিন্ন সেক্টরে যাদের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং যারা সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা রোকেয়া সুলতানা। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বেগম শামসুন্নাহার চাঁপা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী মারুফা আক্তার পপি।’
এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে যারা কাজ করেন এরকম বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নাম চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও শিল্প সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনজনের নাম বেশি করে আলোচিত হচ্ছে এবং এই তিনজনের মধ্যে অন্তত একজনকে সংসদে দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশী এগিয়ে আছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। নাটকীয় কিছু না ঘটলে তিনি সংরক্ষিত কোটায় সংসদ সদস্য হতে যাচ্ছেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এছাড়াও শমী কায়সার এবং তারিন জাহানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের তালিকায় জনপ্রিয় উপন্যাসিক এবং সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের নাম রয়েছে। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে যদি শেষ পর্যন্ত না হতে পারেন সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের কাছে তিনি প্রথম পছন্দের। এছাড়াও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের নামও সংক্ষিপ্ত তালিকা আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্যবসা এবং কর্পোরেট কোটায় প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকের নাম রয়েছে। এছাড়া রুবাবা দৌলা মতিনের নামও এই তালিকায় আছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন নারী ব্যবসায়ীর নাম এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।’
বিজ্ঞানী, গবেষক এবং শিক্ষাবিদদের তালিকায় অন্তত পাঁচটি নাম আছে। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর নগরের সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের নাম বিশেষ ভাবে আলোচিত হচ্ছে। তরুণ অনুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত বয়সের বিচারে যদি সেঁজুতি সাহাকে অপেক্ষা করতে হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এছাড়াও সাবেক সচিব এবং বিচারপতিদের নিয়েও ভাবা হচ্ছে এবং তাদেরও বেশ কয়েকজনের নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সচিব এবং মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিব কামরুন নাহার, সাবেক বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ সহ আরও অন্তত দুজন বিচারপতি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই সংক্ষিপ্ত তালিকা পরিবর্তিত হতে পারে। আবার সংক্ষিপ্ত তালিকায় নতুন নামও ঢুকতে পারে। শেষ পর্যন্ত নারী সংসদ সদস্য কারা হবেন তা চূড়ান্ত করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’