নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। তৃণমূলের আওয়ামী লীগ কাউকে মানছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রতিটি জেলায় উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুই তিন ভাগে বিভক্ত। আর এই বিভক্তি দূর করার জন্য যে সমস্ত উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তার কোন উদ্যোগই ফলপ্রসূ হয়নি। সর্বশেষ এখন বিভাগীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে ডাকা হচ্ছে এবং তাদের ডেকে দল গোছানো এবং দলের ভেতর বিভক্তি দূর করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই ধারাবাহিক বৈঠকের আয়োজন করেছেন। বৈঠকের প্রথম পর্যায়ে রংপুর বিভাগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখা, দলের ভেতর কোন্দল বন্ধ করা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় দলীয় নেতা-সংসদ সদস্যরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আজকে ঢাকা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর নেতাদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল এবং আগামী ৪ এপ্রিল খুলনার জেলা নেতা এবং সংসদ সদস্যদের সাথে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বৈঠকগুলোতে দলের নেতৃবৃন্দ যে বক্তব্য দিচ্ছেন তৃণমূল সেগুলো পাত্তা দিচ্ছে না।’
এ বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন আওয়ামী লীগের নেতা বলেছেন যে, শেখ হাসিনা ছাড়া কারও কথার দাম নেই। আমাদের নেতারা যে সমস্ত কথা বলেন, সেসমস্ত কথা বার্তা মূল্যহীন। একমাত্র শেখ হাসিনা যদি কোন কথা বলেন তাহলে সেটির দাম আছে।
তৃণমূলের মধ্যে এখন যে মনোভাবটি দেখা যাচ্ছে তা হলো, আওয়ামী লীগে আসলে কোন নেতারই কোন ক্ষমতা নেই। তারা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না এবং কর্মীদের জন্য কোন উপকারও করতে পারেন না। তারা যে সমস্ত নির্দেশগুলো দেন সে সমস্ত নির্দেশ তারা নিজেরাই পালন করেন না।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একজন নেতা বলছেন যে, রংপুর অঞ্চলের কথাই ধরা যাক, এখানে আওয়ামী লীগেরে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন যে, রংপুরে উপজেলা নির্বাচনে কোন এমপি-মন্ত্রীরা প্রার্থী দিতে পারবে না। কিন্তু রংপুরে একজন প্রভাবশালী নেতা উপজেলায় তার পছন্দের প্রার্থীকে দিচ্ছেন। আবার শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের আরেকজন সংসদ সদস্য যিনি গতবার মন্ত্রী ছিলেন তিনিও প্রার্থী দিচ্ছেন। তাহলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাকে নির্দেশ দিচ্ছেন এবং কাকে পরামর্শ দিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা তৃণমূলে বিভিন্ন কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারা যে সমস্ত কথা বার্তা বলেন তারা সে সমস্ত কথা বার্তা রাখেন না। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তারা যে আশ্বাস প্রদান করে সে আশ্বাস প্রতিশ্রুতি রাখে না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে তারা যে সমস্ত আশ্বাস দেন, বাস্তবে দেখা যায় যে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের কোন ক্ষমতায় নেই। এছাড়াও বিভিন্ন কমিটি গঠনের প্রশ্নেও অন্যান্য নেতারা কথা দিয়ে কথা রাখেন না।’
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা ছাড়া কারো কথারই দাম নেই। তারা কখন কি বলেন এবং কোন উদ্দেশ্যে বলেন তা নিজেরাও জানেন না। অবশ্য এ উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতারা একমত নন। তারা বলেছেন যে, আওয়ামী লীগের সব সিদ্ধান্তই আসে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছ থেকে। সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরকে আওয়ামী লীগ সভাপতি যা বলেন সেটি তারা বাস্তবায়ন করেন।
তবে, তৃণমূল বলে অন্য কথা। তাদের মতে শেখ হাসিনা যে সমস্ত নির্দেশনাগুলো দেন সেগুলো সম্পূর্ণটা কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে বাস্তবায়ন করেন না। বিভিন্ন কমিটি গঠনে সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্যরা তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নানারকম বাণিজ্য করে কমিটি গঠন করে। আর একারণেই তৃণমূলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দূরত্ব তৈরী হচ্ছে। শেখ হাসিনা ছাড়া তৃণমূল আসলে কারও কথায় মানছে না।’