নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা আগামী ২১ ও ২২ জুন নয়াদিল্লিতে সরকারি সফরে যাবেন। এটি হবে তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হবে ভারতে। অবশ্য সম্প্রতি তিনি ভারত সফর করে ফিরে এসেছেন। তবে সেটি ছিলো একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। টানা তৃতীয় বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শপথ গ্রহণ করেছেন। আর এই শপথ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্যই শেখ হাসিনা দিল্লিতে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে তিনি আলো ছড়িয়েছেন এবং বাংলাদেশের অভিপ্রায় দিল্লিকে সুস্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি যেমন নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির প্রবীণ নেতা আদভানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঠিক তেমনই গান্ধী পরিবারের সঙ্গে তার হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এখন তিনি আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক সফরে যাবেন, যেটি নির্বাচনের আগেই নির্ধারিত ছিল। শুধু তাই নয়, দেশে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৯ জুলাই চীনে যাবেন বলেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। আর এই দুই দেশে সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা সমান্তরালভাবে ভারত এবং চীনের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। দুটি দেশই বাংলাদেশের ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট। অথচ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারত-চীনের বিরোধ নতুন করে আলোচনার বিষয় নয়। দুটি দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে কেবল কূটনৈতিক লড়াইয়ে লিপ্ত নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং আধিপত্যের লড়াইয়েও লিপ্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন উপমহাদেশের দিকে নজর দিয়েছে। উপমহাদেশের মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল, রীতিমতো দখল করে নিয়েছে। আর এ কারণেই ভারতের কাছে বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর অন্যদিকে বাংলাদেশের এখন যে তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট, সেই অর্থনৈতিক সঙ্কটকে মোকাবেলা করার জন্য চীনের সহায়তার কোন বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী চীনের সঙ্গে বেশ কিছু বড় বড় প্রকল্প চূড়ান্ত করবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
সাধারণত দেখা যায় যে, যারা চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক করে তাদের সঙ্গে ভারতের দ্বৈরথ তৈরি হয়। আবার যারা ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক করে তাদের কাছ থেকে চীন মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বিরল ব্যতিক্রম কীভাবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শেখ হাসিনার ব্যালেন্স ডিপ্লোম্যাসির কারণে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ইমেজ, তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গে যেমন অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিচ্ছেন, পাশাপাশি চীনের সঙ্গে নির্বাচনের পর একটি রাজনীতিমনস্ক সম্পর্ককেও পল্লবিত হতে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ১৪ দলের কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা চীন সফর করে এসেছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছিল বলে জানা যায়। এছাড়াও আওয়ামী লীগের তরুণদের একটি দল চীন সফর করে এসেছে। আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি দল খুব শিগগিরই চীনে যাবেন। যে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন কাজী জাফরউল্লাহ।’
কূটনৈতিক মহল মনে করেন যে, শেখ হাসিনা এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে। তবে কেউ কেউ মনে করতেই পারেন যে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ভারতের ওপর একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ রাখার কৌশল করেছে আওয়ামী লীগ। তবে ঢাকার সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র দপ্তর এ ধরনের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছে। তারা বলছেন যে, দুটি প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মনে করে যে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্কের শেকড় অনেক গভীরে। আর এ কারণেই ভারতের কাছে তিনি বিকল্পহীন। তবে বিভিন্ন মহল মনে করে যে, ভারতের সামনে আর কোন বিকল্প নেই। কারণ বাংলাদেশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ভারতকে জ্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। এরফলে ভারতের অনেক বেশি লাভ হয়েছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে ভালো। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার জন্য যে আর্থিক সহযোগিতা দরকার সেটি ভারতের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। আর এ কারণেই শেখ হাসিনার ‘ব্যালেন্স ডিপ্লোমেসি।’