নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগ ৭৫ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। ৭৫ বছরেও এই রাজনৈতিক দলটি সবুজ, তারুণ্যে উদ্দীপ্ত এবং অত্যন্ত শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটি এখন চতুর্থ মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এত দীর্ঘ সুখকর সময় কখনও কাটেনি।
৭৫ বছরে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে সাড়ে ২৩ বছরের কিছুটা বেশি সময়। বাকি সময় তাদেরকে বিরোধী দলে থাকতে হয়েছে। ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সময় মোকাবেলা করতে হয়েছে। নেতাকর্মীদেরকে জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তারপরও এই দলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়নি। এই দলটি কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়নি। বরং যত আঘাত পেয়েছে ততই যেন দলটি শক্তিশালী হয়েছে।’
এই ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, অর্ধেকের বেশি সময়ে আওয়ামী লীগকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা। ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগে ৪৩ বছরই তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের জন্য তো বটেই, সারা বিশ্বের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি একটি অনন্য উদাহরণ। বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক তা হল এই ৪৩ বছরে আওয়ামী লীগে তিনি কেবল নিরঙ্কুশ থাকেননি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একান্ত আপন মানুষ হিসেবে নিজেকে ক্রমশ উদ্ভাসিত করেছেন। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগে বিকল্পহীন। তার বিকল্প আওয়ামী লীগ ভাবতে চায় না, ভাবতে পারে না এবং সেই ভাবনাটিকে প্রশ্রয় দিতে চায় না।
আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা হলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এই ৪৩ বছরে তিনি একদিনে আওয়ামী লীগের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হননি। এই ৪৩ বছরে একবারে তিনি আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরায় পরিণত হননি। তাকে তিল তিল করে প্রতি মুহূর্তে সংগ্রাম করে আজকের জায়গায় আসতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস যেমন বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়, তেমনি শেখ হাসিনাও আওয়ামী লিগের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য অংশ। আওয়ামী লীগের বিকাশ এবং আওয়ামী লীগের উজ্জীবন যেমন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান তেমনি আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন এবং আজকের অবস্থান শেখ হাসিনার অবদান।
আওয়ামী লীগকে আমরা দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হল আওয়ামী লীগের উদ্ভব এবং বিকাশ, যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিস্মরণীয় অবিসংবাদিত। আর আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়ে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নীতি এবং তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে। আর আওয়ামী লীগকে এই ৭৫ বছরে টিকিয়ে রাখা, সংগঠিত রাখা এবং জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত রাখার দায়িত্বটি নিখুঁতভাবে পালন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব যখন শেখ হাসিনা গ্রহণ করেন, তখন আওয়ামী লীগ ছিল বিলীন প্রায় একটি বিপর্যস্ত রাজনৈতিক দল, যে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ছিল, নেতাকর্মীরা ছিলেন বিভ্রান্ত বিপর্যস্ত হতবিহ্বল। তাদের চারপাশে শুধু অন্ধকার ছিল। তাদের আশার আলো ছিল না। সেখান থেকে আলোর মশাল জ্বালিয়ে শেখ হাসিনা এক দীর্ঘ সংগ্রাম পাড়ি দিয়েছেন।’
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনকে আমরা দুটি অধ্যায়ে ভাগ করতে পারি। প্রথম অধ্যায় হল তার সংগ্রামের অধ্যায়। তিনিও ৮১ থেকে দীর্ঘ ২১ বছর তিল তিল করে সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগকে আবার পুনরুজ্জীবিত করেছে, সংগঠিত করেছেন, নতুন প্রজন্মের রক্ত সঞ্চালন করেছেন। আওয়ামী লীগকে তিনি ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এনেছিলেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগকে একটি রাষ্ট্রক্ষমতার উপযোগী রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর এক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় বলা যায় আওয়ামী লীগ তার আদর্শের সঙ্গে কিছুটা সমঝোতা করেছে বটে, তবে ক্ষমতায় থাকাই যে শেষ কথা এটি আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে। ক্ষমতায় থাকলে সব আদর্শ, সব অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করা যায়। সেই লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই মেয়াদে প্রায় ২১ বছর ক্ষমতায় আছে। এটি যে কোন রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অহংকার এবং গৌরবের বিষয়। আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনা এখন সমার্থক। শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ অস্তিত্ববিহীন একটি বিবর্ণ রাজনৈতিক দল। শেখ হাসিনা যেমন আওয়ামী লীগে শেষ কথা, তিনিই আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা।’