নিজস্ব প্রতিবেদক: দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই সরকার প্রচন্ড চাপে পড়েছে। একদিকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, রিজার্ভ কমে যাওয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাসের সংকট ইত্যাদি নানা মুখী সংকেট সরকার ব্যতিব্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়গুলো হস্তক্ষেপ করছেন। সামনে রমজান উপলক্ষে তিনি চারটি পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই বাজারের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। কাজেই নতুন সরকার যে শুরুতে একটু স্বস্তিকর অবস্থায় থাকবে এমন বাস্তবতা নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ১১ জানুয়ারি যে সরকার গঠিত হয়েছে সেই সরকার শুরু থেকেই পাঁচটি বড় ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে এবং এই চাপগুলো মোকাবেলার জন্য তাদের হাতে কোন সময় নেই। দ্রুত যদি তারা এই সংকট গুলো সমাধান না করতে পারে, তাহলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার চাপে আছে। এই চাপ মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নিয়েই তারা কাজ করতে চায়।
সরকারের সামনে যে পাঁচটি চাপ খুব বড় আকারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে।
১. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: গতকাল সন্ধ্যায় পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি করেছে। অন্যদিকে চালের বাজারে অভিযান চালিয়েও চাল চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অন্যান্য দ্রব্য মূল্যের দামও লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সামনে রমজানে সিন্ডিকেটের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে সরকার যতই হাঁকডাক দিক না কেন ব্যবসায়ীদেরকে অনুরোধ করা বা হুমকি বা কঠোর হওয়ার নিষেধাজ্ঞা দিক না কেন দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এটা সরকারের জন্য একটা বড় ধরনের মাথাব্যথা ছিল। মানুষ এখন আর সহ্য করতে পারছে না। এর ফলে সরকারের জন্য আগামী কয়েকদিন গুরুত্বপূর্ণ। আগামী রোজার মধ্যে যদি সরকার অসহনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তাহলে বড় ধরনের সমস্যা পড়তে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত।
২. অর্থনীতির সংকট: অর্থনীতির অবস্থা চেহারা ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকার বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, খেলাপি ঋণের অবস্থা, ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা সবকিছু মিলিয়ে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংকট মোকাবেলার জন্য। সবচেয়ে বড় পরিস্থিতি হয়েছে সরকারের আয় কমে যাচ্ছে। রাজস্ব আসছে না সে ভাবে। এরকম বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকট যদি মোকাবেলা না করা যায় তাহলে দ্রুতই পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।_
৩. গ্যাস সংকট: দ্রব্যমূল্যের মতোই গ্যাস সংকট জনজীবনে সমস্যা। সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। গ্যাস সংকট নিয়ে তিনবারের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু একেক দিন একেক কথা বলছেন এবং তার এ সমস্ত কথাবার্তা সাধারণ জনগণ তো নয়, ব্যবসায়ীরা এখন আর বিশ্বাস করছেন না। তার কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হবে।
৪. সামাজিক অস্থিরতা: একদিকে যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রাত্যহিক জীবনে নানা রকম সংকট, তেমনই সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অনভিপ্রেত বিতর্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সরকার এই পরিস্থিতিকে কিভাবে মোকাবিলা করে সেটি অনেকে বুঝতে চাইছে। পাঠ্যপুস্তকে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কেউ কেউ। ফলে পুরো পরিস্থিতি একটি জটিল আকার ধারণ করেছে।
৫. নতুন করে রাজনৈতিক আন্দোলন: অনেকে ধারণা করেছিল নির্বাচনের পর বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন গুটিয়ে ফেলবে কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। নতুন করে তারা আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলন সরকারকে সবসময় একটা চাপে রাখবে। সবকিছু মিলিয়ে নতুন সরকার স্তস্তিতে নেই। এই চাপ মোকাবিলা করে আগামী পাঁচ বছর কিখাকে সরকার দেশ পরিচালনা করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।’