জেমস আব্দুর রহিম রানা: ভারতের সীমান্ত ঘেষা জেলা যশোরে গত এক সপ্তাহ ধরে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এদের অধিকাংশরাই শিশু। শুধু আউটডোরেই নয়, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
যশোর ২৫০ শয্য বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি ২৪ শয্যার হলেও বর্তমানে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮১ জন শিশু রোগী। আর এই ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ায় আজ শুক্রবার সকালেই ভর্তি হয়েছে ৮ জন শিশু রোগী।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও আউটডোর ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক নবজাতক ও শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে কেউ কেউ সর্দি কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও অনেক নবজাতকের গুরুতর অবস্থাও দেখা গেছে।
যশোরের চৌগাছা উপজেলার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার তার ছেলে জুনায়েদকে ঠান্ডাজনিত রোগের কারণে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বলেন, ঠান্ডা তেমন ছিলনা এবার। গত এক সপ্তাহ থেকে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি করেয়েছি। কিন্তু হাসপাতালে রোগী বেশি থাকায় ছেলের জন্য বেড মেলেনি, তাই মেঝেতেই বিছানা পেতে আছি।
যশোর শহরের পার্শ্ববর্তী সীতারামপুরের বাসিন্দা পল্লবী রানী ছেলে পরম রায়কে নিয়ে বিছানা পেতেছেন হাসপাতালের মেঝেতে। তিনি বলেন, সকালে ছেলেকে নিয়ে এসেছি, ভর্তির পরপরই একবার ডাক্তার এসে দেখে গেছে। বর্তমান শিশুটি একটু সুস্থ আছেন।
শিশু ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে থাকা ঠান্ডাজনিত রোগে ভর্তি হওয়া অন্যান্য শিশুর স্বজনরা জানান, সকাল থেকে বেশ কয়েকজন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে অনেকেই মেঝেতে বিছানা পেতেছেন।
যশোর ২৫০ শয্য বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে চার মাস বয়সী শিশু যুবায়েরের মা সেলিনা বেগম, ১৩ মাস বয়সী আলিফার মা ফারজানা ইয়াসমিন, রাফিয়ানের মা হামিদা বেগম বলেন, তাদের শিশুরা জ্বর, ঠান্ডা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ওশ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। গত কয়েকদিন বিভিন্ন ডাক্তারকে দেখিয়েছি। কোনো উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হুসনেয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা কম ছিল। সময়ের সাথে সাথে রোগীর চাপ আউটডোর ও শিশু ওয়ার্ডে বাড়ছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আব্দুস সামাদ জানান, হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক ও শিশুদের নানা ধরনের রোগ বেড়ে গেছে। আগের চেয়ে আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী শিশু। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, নিউমোনিয়া, রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুন অর রশিদ বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ হচ্ছে। এই সময় নবজাতক ও শিশুদের মায়ের কাছাকাছি রাখতে হবে। ঘরের মেঝে স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রাখা যাবে না। শীতে তাদের কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। সুষম খাবারের পাশাপাশি তাদের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। শিশুর ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে, স্যালাইনের পানি গরম করার পর ঠান্ডা করে খাওয়াতে হবে। শিশুদের ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া শীতে শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এতে তাদের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।