আপনার জানার ও বিনোদনের ঠিকানা

শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়েই রিকশা চালান দ্বীন মোহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন রিকশাচালক বাবা। মাত্র ৪ বছর বয়সী কন্যাশিশুকে সঙ্গে করেই রাজধানীর অলিগলিতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের নিরন্তর লড়াই করছেন। এটাকে ঠিক বাবার ভালোবাসা নাকি দায়িত্ববোধ বলা হবে তা নিয়ে হয়তো কথা হতে পারে। কিন্তু এমন দায়বোধের দৃশ্যই দেখা গেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায়।

ত্রিশোর্ধ্ব যুবক দ্বীন মোহাম্মদের বাড়ি নরসিংদীর বেলানগরে। সম্প্রতি তিনি রাজধানীতে উঠেছেন নিজের মেয়েকে নিয়ে। এই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে কেন রিকশা চালাচ্ছেন তা জিজ্ঞেস করতেই চোখ ছলছল করে উঠল দ্বীন মোহাম্মদের।

বললেন, বাসায় তার একমাত্র বৃদ্ধ-অসুস্থ বাবা; মেয়েকে দেখে রাখার মতো অবস্থায় নেই। কোমলমতি এই শিশুকন্যাকে রেখে স্ত্রী পালিয়ে গেছেন তার এক ‘প্রেমিকের’ সঙ্গে। সে কারণে মেয়েকে একাই নিজের বুকে আগলে রাখছেন দ্বীন মোহাম্মদ। মেয়েকে কোলে নিয়ে কিংবা সিটে বসিয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করেন। ভাড়া পেলে যাত্রীর পাশেই মেয়েকে বসিয়ে দেন।

শনিবার যাত্রাবাড়ী থেকে মানিকনগর যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন যাত্রী ইহতেশাম রাসেল। রিকশা তিনি পেলেন-সঙ্গে চালকের ছোট্ট মেয়েটিকে দেখে অবাকও হলেন।

ইহতেশাম রাসেল বলেন, ‘মানিকনগর যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলাম। উনার রিকশার পাশে এসে সঙ্গে তার মেয়েকে দেখে বিস্মিত হই। কৌতুহল জাগল মনে। একপর্যায়ে ভাড়া ঠিক করে গন্তব্যে রওয়ানা দিলাম। মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বসলাম। তারপর আলাপচারিতায় জানতে পারলাম তার অসহায়ত্বের কথা।’

রাসেল জানান, প্রথমে এক রিকশাচালক ৮০ টাকা ভাড়া চাইলে তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন। এমন সময় পাশ থেকে দ্বীন মোহাম্মদ ডাক দেন। বলেন, ৫০ টাকায় যাবেন তিনি। ন্যায্য ভাড়া চাওয়ায় তার রিকশায় উঠেন রাসেল।

রাসেল বলেন, ‘প্রথমে মেয়েটির মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে দ্বীন মোহাম্মদ জানান, মারা গেছে। এটা শুনে আমি ‘থ’ মেরে বসে রইলাম। এরপর আস্তে আস্তে আলাপ করতে থাকলাম তার পরিবার ও অন্যান্য বিষয়ে। একপর্যায়ে তিনি বললেন-মেয়েটির মা করো সঙ্গে পালিয়ে গেছে।’

রাসেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় রিকশাচালক জানান, গ্রামে বৃদ্ধ বাবা ছাড়া আর কেউ নেই তার। মা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। গ্রামে জমি-জিরাতও নেই। জীবনধারনের মতো তেমন ভালো সুযোগও নেই। এজন্য ঢাকায় এসেছেন জীবিকার খোঁজে। একদিকে অর্থ সংকট, অন্যদিকে অবুঝ শিশুকে রেখে স্ত্রীর চলে যাওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে ঢাকায় মানবেতর জীবন শুরু করেছেন ঢাকায়।’

দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘দুদিন হলো ঢাকায় এসেছি। মেয়েটির জন্য অনেক কষ্ট হয়। মেয়েকে নিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকি। অনেক সময় নানান কিছু চায়, দিতে পারি না। তখন আরও কষ্ট হয়। যদি কিছু টাকা থাকতো ভাসমান হলেও ছোট কোনো দোকান দিয়ে চলতাম। রিকশা চালিয়ে যা পাই তা দিয়ে মনে হয় চলতে পারবো না। নতুন এসেছি ঢাকায় তাই তেমন কিছু চিনি না। এজন্য ভাড়া পাই কম।’

যাত্রী ইহতেসাম রাসেল বলেন, ‘লোকটির অসহায়ত্ব দেখে খুবই কষ্ট লাগলো। সাধ্যমতো যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করলাম। কিন্তু আমি জানি এতে তার তেমন কোনো উপকার হবে না। সামর্থবানরা যদি এ ধরনের লোকদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাদের কষ্ট একটু হলেও লাঘব হবে।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

বৈষম্য দূর করার জন্যেই কোটার প্রয়োজন: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্য দূর করার জন্যেই কোটার প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। শনিবার (১৩ জুলাই’) তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা

‘ভারতের সাথে আবার সমঝোতার চেষ্টা বিএনপির’

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাঝখানে তীব্র ভারত বিরোধিতা, বিএনপির একজন নেতার ভারতীয় শাল পুড়িয়ে ফেলার ঘটনার পর আবার বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এখন ভারতের সঙ্গে একটিই সুসম্পর্ক

‘বড় ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা, সংকট কাটছে না শিগগির’

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাস সংকটের জাঁতাকলে পড়ে বন্ধ হয়ে আছে অনেক শিল্পকারখানার চাকা। এ কারণে উৎপাদন শিকেয় উঠেছে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য সরবরাহে নেমে এসেছে

মসজিদে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিল না আদালত

ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্ট লাউডস্পিকারে আজান দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মসজিদে কেবলমাত্র একজন মুয়াজ্জিন খালি গলায় আজান দিতে

সদর থানার ওসির সাথে শিয়ালকোল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাত

নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ন কবিরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন সদর উপজেলার ৪নং শিয়ালকোল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার (২৯

‘সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন: কোন্দল বাড়াবে আওয়ামী লীগে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ ৪৮ টি সংরক্ষিত আসনের জন্য গতকাল তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। ৪৮ টি আসনে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন স্থানীয় এবং