ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মারার আগে ফেসবুক মেসেঞ্জারে এ নিয়ে কথা বলেছেন খুনিরা। আবরারকে নিয়ে অন্তত ১৭ জনের কথোপকথনের রেকর্ড পেয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ।
বুয়েটের শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ রয়েছে। সেটির নাম এসবিএইচএসএল (শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগ)। শনিবার রাতে ছাত্রলীগ নেতাদের এই গ্রুপে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন লেখেন,সেভেন্টিনের আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও বলেছিলাম। তোদের তো দেখি বিগার নাই। শিবির চেক দিতে বলেছিলাম। দুই দিন টাইম দিলাম।’ এরপর একজন সেখানে লেখেন,ওকে ভাই’। রবিন আবার লেখেন, ‘দরকার হলে ১৬তম ব্যাচের মিজানের সঙ্গে কথা বলবি। ও তার সঙ্গে শিবিরের ইনভলভমেন্ট থাকার প্রমাণ দিবে।’ ম্যাসেঞ্জার গ্রুপেই রবিবার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে সবাইকে হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন রবিন। এর পরই রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরার ফাহাদকে তাঁর রুম থেকে ডেকে নিয়ে যান তানিম, বিল্লাহ, অভি, সাইফুল, রবিন, জিওন ও অনিক। রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকাল ম্যাসেঞ্জারে লেখেন, ‘মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে। এখন আমরা কী করব?’ রবিন বলেন, ‘শিবির বলে পুলিশের হাতে তুলে দে।’
রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে ‘এসবিএইচএসএল ১৬+১৭’ গ্রুপ নামের আরেকটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা লেখেন,‘আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?’ জবাবে শামসুল ও সজীব জানান, ‘২০১১-তে আছে।’ এ কক্ষেই অমিত সাহা থাকেন। মেসেঞ্জারে অন্য আরেকটি কথোকথন পাওয়া গেছে, যা ছিল অমিত সাহা ও ইফতি মোশাররফ সকালের মধ্যে। এতে অমিত সাহা লিখেছেন, ‘আবরার ফাহাদের ধরছিলি তরা?’ ইফতি জবাব দেন, ‘হ’। আবার প্রশ্ন করেন অমিত, ‘বের করছোস?’ জবাবে ইফতি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কী হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি।’ এবার অমিত লেখেন, ‘স্বীকার করলে তো বের করা উচিত।’ এরপর ইফতি জবাব দেন, ‘মরে যাচ্ছে; মাইর বেশি হয়ে গেছে।’ জবাবে অমিত সাহা লেখে, ‘ওওও বাট তাকে তো লিগ্যালি বের করা যায়।’
এদিকে, গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রিমান্ডে থাকা ইফতি। হাকিম সাদবির ইয়াসির আহসান চৌধুরী তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ইফতি তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকারসহ ২০-২৫ জন আবরারকে মারধর করে। ক্রিকেট খেলার স্টাম্প, মশারি টাঙানোর লোহার রড দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। এক দল মারধর করে বেরিয়ে গেলে আরেক দল এসে মারধর করে। বাইরে থেকে আবার তারা ফিরে এসে মারধর করে। এভাবে দফায় দফায় আবরারকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আবরার নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে ওই কক্ষ থেকে বের করে নেওয়া হয়। এরপর ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান আবরারের মৃত্যু হয়েছে।