সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি, জালালপুর ও কৈজুরি ইউনিয়নের যমুনা
নদীর ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তরা নতুন বসতবাড়ি পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।
তারা এখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখন নতুন বাড়িতে সুখী জীবন যাপন করছে। অথচ
কয়েকদিন আগেও তাদের মাথার উপর চাল ছিল না। যমুনার ভাঙ্গণ কবলিত এলাকায়
পলিথিনের ছাউনি তুলে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছিল। কোথায়
যাবে ,কি খাবে তা নিয়ে ছিল দুঃশ্চিন্তায়। আরবিইএএপি প্রকল্পের আওতায়
স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ এর অর্থ সহযোগিতায় মানবমুক্তি সংস্থা এসব যমুনা
নদীর ভাঙ্গণে নিঃস্ব ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে বসতবাড়ি স্থানান্তর ও
পূণঃস্থাপন করে দেয়। ফলে তারা নতুন বাড়ি পেয়ে শস্তির জীবন ফিরে পেয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাকুরতলা ও হাট
পাচিল গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, যমুনার ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে এ
প্রকল্পের আওতায় নতুন স্থানে বাড়িঘর স্থানান্তর করে দিয়ে সেখানে পাঁকা
পায়খানা ও টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছে মানবমুক্তি সংস্থা। ফলে তারা এখন
নতুন বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে বসবাস করছে। বসতবাড়ি
স্থানান্তর ও পূণঃস্থাপনের জন্য প্রতিটি পরিবারকে দেয়া হয়েছে দুই দফায় ২০
হাজার টাকা অর্থ সহায়তা।
এ বিষয়ে সুবিধাভোগী নার্গিস খাতুন সহ অনেকেই বলেন, যমুনা নদীতে বাড়িঘর
বিলিন হয়ে যাওয়ার পর আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। মাথা গোজার মত কোন
আমাদের ঠাই ছিল না। কোথায় যাব, কি খাব তা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম।
নতুন স্থানে বাড়ি স্থানান্তরের কোনো উপায় ছিলনা আমাদের। ফলে ভাঙ্গণ কবলিত
এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পলিথিন টানিয়ে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে
দিন পড়ে ছিলাম। মানবমুক্তি সংস্থার কর্মীরা আমাদের এ অসহায় অবস্থা দেখে
আমাদের পাশে এসে দাড়ায়। তারা থাকার জন্য নতুন স্থানে জমির ব্যবস্থা করে
দেয়’। এছাড়া ঘর সড়ানো ও নতুন স্থানে ঘর তোলার জন্য দুই দফায় ১০ হাজার করে
মোট ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এছাড়া নতুন বাড়িতে বিশুদ্ধ
পানির জন্য টিউবওয়েল স্থাপন ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য পাঁকা পায়খানা নির্মাণ
করে দিয়েছে। ফলে আমরা আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ এখন আরাম আয়েশে সুখী জীবন
যাপন করছি। এতে আমরা অত্যন্ত খুশি।
এ বিষয়ে কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন
খোকন বলেন, যমুনা নদীর ভাঙ্গণে নিঃস্ব এ সব পরিবার মানবমুক্তি সংস্থার
সহায়তায় নতুন বসতবাড়ি পেয়ে সুখে বসবাস করছে।
তাদের এ প্রকল্পের মেয়াদ ও ভাঙ্গণের সময়কাল দুই মাস বৃদ্ধি করা হলে এই ৩
ইউনিয়নের আরও অন্তত ৩ শতাধিক যমুনার ভাঙ্গণে নিঃস্ব ও ঝুঁকিপূর্ণ অসহায়
মানুষ নতুন বসতবাড়ি ফিরে পাবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আজাদ
রহমান বলেন, ভাঙ্গণ কবলিতরা মানবমুক্তির অর্থ সহায়তা পাওয়ায় তাদের সুদিন
ফিরে এসেছে। এতে আমরা খুশি। এ প্রকল্পটি অব্যহত থাকলে যমুনার ভাঙ্গণ
কবলিত অসহায় মানুষ উপকৃত হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে
প্রকল্পটি চালু রাখার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন,
আমরা নদী ভাঙ্গণে নিঃস্বদের সর্বদা সহযোগিতা করে আসছি। পাশাপাশি
মানবমুক্তি সংস্থা ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাড়িয়ে সহায়তা প্রদান করায় তারা
উপকৃত হয়েছে’। আমি এ প্রকল্পটি চালু রাখার অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে মানবমুক্তি সংস্থার প্রতিনিধি শামীমা আক্তার বলেন, দাতা সংস্থা
চাইলে এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারেন। আমাদের তরফ থেকে এ বিষয়ে
তাদের অনুরোধ জানানো হবে।