লাশ দেখে উচ্চৈঃস্বরে কান্নাকাটি নিষিদ্ধ

আমাদের দেশে অনেকেই বলেন, মৃত স্ত্রীকে স্বামী আর মৃত স্বামীকে স্ত্রী দেখতে পারেন না। অথচ শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। অন্যদিকে মৃত পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক সমাজের সমস্ত মাহরাম, গায়রে মাহরাম সবাই দেখে থাকে। এমনকি জানাজার পরও কাফন খুলে মুখ দেখানো হয়, আর স্বজনের লাশ দেখে কান্নাকাটি করে হা-হুতাশ করা হয়। অথচ শরিয়তে হা-হুতাশ এবং উচ্চৈঃস্বরে কান্নাকাটিকে হারাম করা হয়েছে। 

যারা এরূপ করে তাদের বেলায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়ার চরম আশঙ্কা রয়েছে। এসব কিছু হচ্ছে মূর্খতা এবং দীনি ইলম থেকে অজ্ঞতার অনিবার্য ফল। মৃত ব্যক্তিটি যদি জাহান্নামি হয় তবে সমগ্র সৃষ্টি তার প্রতি অভিশাপ করে। নাপাকির দুর্গন্ধে যেমন পরিবেশ দূষিত হয়, বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায় তেমনি আওয়াজ ও কথাবার্তারও স্থূলতা আছে। এ কারণেই কথাবার্তা ক্যাসেট করা সম্ভব হয়। ওই অভিশাপ নাপাকির মতো দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং পরিবেশ বিষাক্ত করে ফেলে। এজন্যই তাড়াতাড়ি দাফন কাজ সমাপ্ত করে পরিবেশকে মুক্তকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানাজা সামনে রেখে এরূপ বলতে শোনা যায় যে, ‘লোকটি কেমন ছিল?’ এর জবাবে লোকেরা বলে, ‘খুবই ভালো ছিল।’ এতে ধারণা করা হয় লোকটি নাজাত পেয়ে যাবে। যদি এরূপ ধারণা সঠিক হয় তাহলে আর আমল করার কী প্রয়োজন? এরূপ করলেই তো চলে! শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। বরং মৃত ব্যক্তির শত্রু এবং তার প্রতি অসন্তুষ্ট লোকেরা এর জবাবে বলে, ‘লোকটি অত্যন্ত কপট এবং জঘন্য চরিত্রের অধিকারী ছিল।’ এটা নিছক ধারণা নয়; বরং লোকেরা এরূপ করে বলে অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন। 

যারা এরূপ করে তারা বুখারির একটি হাদিস পেশ করে থাকে, রসুলের সামনে এরূপ করা হয়েছে। অথচ নিম্নোক্ত কারণে এ হাদিসের দ্বারা এরূপ উক্তি করা সঠিক নয়। জানাজা সামনে নিয়ে রসুল এমন উক্তি করেননি। অথচ বর্তমানে জানাজা সামনে নিয়ে এরূপ উক্তি করা হয়। রসুল ওহির মাধ্যমে অবগত হয়ে একজন সম্পর্কে জান্নাতি আর একজন সম্পর্কে জাহান্নামি হওয়ার খবর দিয়েছিলেন। তাদের একজন ছিল নেক্কার, অন্যজন পাপাচারী। বর্তমানে না জেনে, না শুনে নেক্কার ও পাপাচারী সবার জন্যই এরূপ করা হয়।

সাহাবিরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অত্যন্ত প্রিয় এবং উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁরা শরিয়তের মাপকাঠি ও মেরুদন্ড। তাই তাঁদের ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। অন্য কারও জন্য এরূপ করার সুযোগ নেই। রহমাতুল্লিল আলামিন তায়েফের ময়দানে রক্তাক্ত হয়েছেন, প্রস্তরাঘাতে তাঁর সমস্ত শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। খোদা-ই পরোয়ানা নিয়ে তায়েফবাসীদের খতম করে দেওয়ার জন্য ফেরেশতারা নবীর দরবারে প্রার্থনা করে ব্যর্থ হয়েছেন। 

বিশ্বনবী কেবল তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য হেদায়াত এবং ক্ষমা প্রদর্শনের মুনাজাতও অব্যাহত রেখেছেন। কাফিরদের আঘাতে ওহুদের ময়দানে বিশ্বনবীর দেহ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, কাফিরদের প্রচন্ড আঘাতে নবীর শির ফেটে আল্লাহর জমিনে রক্ত ঝরেছে, দাঁত শহীদ হয়েছে, এর পরও তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাসুলভ আচরণ করে ক্ষমার নজিরবিহীন আদর্শ কায়েম করেছেন। 

সাহাবিদের জীবনেও নবীর অনুকরণ-অনুসরণের অনুরূপ আদর্শই ফুটে উঠেছে। ফলে তাঁরা বিশ্ববিজয়ী হিসেবে অমর হয়ে আছেন। আমাদের একই আদর্শে আদর্শবান হওয়া উচিত। বিজাতীয় তরিকার কর্মকান্ড পরিহার করে সাহাবিদের পদাঙ্ক অনুসরণকেই পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর ভিতরেই রয়েছে শান্তি, মুক্তি এবং মুসলিম উম্মাহর সফলতা ও বিজয়।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

মরদেহ দাফন করার সময় মনে হলো জীবিত, মেডিকেলে নেওয়ার পর ঘটলো চাঞ্চল্যকর ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয় মোর্শেদা বেগমকে। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর বাড়িতে নিয়ে এসে মরদেহ দাফন করার সময় স্বজনদের

৮ নভেম্বর ঢাকায় বৃহত্তর র‍্যালির প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় বিপ্লবী ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ৮ নভেম্বর ঢাকায় স্মরণকালের বৃহত্তর র‍্যালি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম

সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)। টিএসসি, হল এবং আবাসিক এলাকায় মাইক বাজানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। শনিবার

সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ায় ঈদগাহ মাঠ দখলের পায়তারা

সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা দূর্গানগর ইউনিয়নের চর নুন্দীগাঁতী গ্রামের দীর্ঘ ২৫ বছরের চর নুন্দীগাঁতী সম্মিলিত ঈদগাহ মাঠের গাছ কেটে নেওয়া ও জমি

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন

বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি দেশের কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশে অযথা ইস্যু তৈরি করে অরাজক পরিস্থিতি