রোহিঙ্গা সংকটের কারণে উচ্চ মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে কক্সবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গাদের কারণে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে কক্সবাজারে। ফলে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বিশ্লেষকেরা।

কক্সবাজার জেলা ২০১৭ সাল থেকে একটি বড় খাদ্য সংকট হিসেবে জিআরএফসি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত বছর জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর পাশাপাশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ খাদ্য সহায়তা বাড়ানো হয়েছে।

বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে ফুড সিকিউরিটি ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (এফএসআইএন) প্রকাশিত প্রতিবেদন ২০২৪-এ বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে নিষ্ফলা মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চ মাত্রার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকতে পারে, যার ৬৫ শতাংশই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

সংস্থাটির মতে, এসব মানুষের তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় বিশেষভাবে প্রভাব রেখেছে প্রতিকূল আবহাওয়া, বৈশ্বিক যুদ্ধ সংঘাত ও উচ্চ মাত্রায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্ব জুড়েই গত বছর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। ওই বছর ২৮ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ সংঘাত, বিশেষ করে গাজা ও সুদানে লড়াই চলার কারণে তীব্র খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়।

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে রেকর্ড খাদ্য শস্য উৎপাদন ও ২০২৩ সালে খাদ্যের সহজলভ্যতার উন্নতি হলেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ধাক্কায় খাদ্য পণ্যের দাম বাড়তিই রয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ তা এসে দাড়ায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে জ্বালানি, গমের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য শস্য, সার ও গবাদিপশুর খাবার আমদানিতে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রেখেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব পণ্যের আমদানি ব্যাহত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। ফলে একদিকে খাদ্য শস্যের আমদানি কমার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্য শস্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অব্যাহত উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য সুবিধা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এসব মানুষের আয় ক্রমেই কমেছে ও তাদের খাদ্য পণ্য কেনার খরচ বেড়েছে।

২০২২ সালে ৭০ লাখের বেশি মানুষ অস্বাভাবিক মৌসুমি বন্যার শিকার হন এবং প্রধানত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহহীন হন ২০ লাখের বেশি মানুষ। এতে তাদের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এ কারণে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলা করার সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের। আগস্টে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী মৌসুমি বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস সৃষ্টি হয়। এর শিকার হন ১৩ লাখ মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের মধ্যে ছয় লাখ মানুষের খাবার, সুপেয় পানি, ঔষুধ ও বিদ্যুতের মতো মৌলিক সেবার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়। একই সময় রাজশাহীতে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ দেখা দেয় এবং দেশে ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটে। মৌসুমভিত্তিক কর্মসংস্থানের প্রভাব এবং খাদ্যসুবিধা ও প্রাপ্যতার ওপর পুনঃপুনন বিপর্যয় মানুষের মধ্যে বড় ধরনের পুষ্টির ফারাক তৈরি করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দুটি রেশন কাট ছাঁট খাদ্য গ্রহণের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছিল। রেশন কাট ছাঁটের কারণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের গ্রহণযোগ্য খাদ্য গ্রহণের স্কোর ছিল, যা ২০২২ সালে ছিল ৫৬ শতাংশ।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

সিরাজগঞ্জ কাজিপুরে বিদ্যুতায়িত হয়ে লাইন শ্রমিক এর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ ঠিক করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শামীম রেজা নামে এক লাইনম্যানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৩-জুলাই) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চালিতাডাঙ্গা

টিএসসিতে হাসিনা-কাদের-ইনুর ‘প্রতীকী ফাঁসি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলের নেতাদের প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। আজ

নামাজের সময় মসজিদে হামলা, বহু নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বন্দুকধারীদের হামলায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে একটি মসজিদের কয়েক ডজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে,পতনের দ্বারপ্রান্তে যখন শেখ হাসিনার সরকার; ঠিক সেসময় ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আওয়ামী লীগ সরকার।

দুবাইয়ে গোপন সম্পদ ৫৩২ বাংলাদেশির, শীর্ষে ভারত ও পাকিস্তান

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের আবাসনবাজার বেশ রমরমা। বিভিন্ন দেশের সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে সন্দেহভাজন অপরাধীরাও এখানে বিনিয়োগ করছে। কিনছে বাড়ি

‘আবার বেগম জিয়ার বিদেশে যাওয়ার গুঞ্জন’

নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল বেগম জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে সিসিইউতে রাখা হয়েছিল। আজ সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়াকে আবার ফিরোজার বাসভবনে