তানজিলা আক্তার রাজশাহী প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজশাহীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচী পালন করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩ টা থেকে রাজশাহীর তালাইমারিতে শহীদি মার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে ৩ টায় রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইটি মিছিল তালাইমারির দিকে রওনা হয় এবং সকলেই একত্রে হয়ে শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’ এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থী ও অংশগ্রহণকারীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মার্চে অংশ নিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জিরো পয়েন্ট ও তালাইমারী এলাকায় এসেছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা গেছে।
ঠিক এক মাস আগে ৫ অগাস্ট দুপুর নাগাদ পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সাথে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এরপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। এ সময় রাজশাহী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয় সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আমাদের সকল শহীদ ভাইদের স্মরণ করে, সকল আহত ভাইদের শ্রদ্ধা জানাতে আজকে এই শহীদি মার্চ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ থেকে প্রায় এক মাস আগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই বাংলাদেশ পাওয়ার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা আমাদের হাজারেরও বেশি ভাইকে হারিয়েছি, যারা শহীদ হয়েছেন। আমরা অসংখ্য ভাইকে আহত অবস্থায় এখনো হাসপাতালে দেখতে পাই। অনেকের হাত নেই, অনেকে তাদের পা হারিয়েছেন। অনেকে চোখ হারিয়েছেন। আম্মার আরো জানান, যে ক্ষতি তাদের পরিবারের হয়ে গেল, এই পার্থিব দুনিয়াতে সেটি পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে ন্যূনতম শ্রদ্ধা জানাতে পারি। দোয়া করতে পারি। সে জায়গা থেকে আজকে একটি শহীদী মার্চ আয়োজন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী বিক্ষোভের শুরু হয়েছিল জুলাই মাসের শুরুতে উচ্চ আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে। ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আদালত। তবে আলোচনা বা রাজনৈতিক সমাধানের পথে না গিয়ে আন্দোলন দমনে বলপ্রয়োগ করতে থাকে সারকার। সরকারের একের পর এক বক্তব্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগের মাধ্যমে আন্দোলন দমন এবং প্রতিবাদকারীদের দিকে গুলি চালানোর মতো ঘটনা পরিস্থিতি আরও জটিল করতে থাকে এবং বিক্ষোভ এক গণআন্দোলনে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ রেখে কারফিউ জারি করলেও আন্দোলন থামেনি। পাঁচ সপ্তাহে শত-শত মানুষের মৃত্যু হয়, যার পূর্ণাঙ্গ হিসেব এখনো পাওয়া যায়নি। আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ১১ অগাস্টের মধ্যে সাড়ে ছয়শ মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়-ইউএনএইচসিআর। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি রক্তপাতের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের।’