নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আমার ছেলে অপরাধী হলে মেনে নিতাম। ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছেলেকে কারাগারে যেতে হলো। ছেলের মুক্তি না হলে আমাকেও কারাগারে নিয়ে যান। ছেলে ছাড়া এই দুনিয়াতে আমার আর কেউ নেই।’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনে নামায় ছেলে মোহাম্মদ মুস্তাকিমকে জেলে যেতে হওয়ায় গণমাধ্যমকে এই কথাগুলো বলেছিলেন অসহায় মা নাসরিন আক্তার। তবে একমাত্র ছেলেকে আকড়ে এত বছর ধরে বেঁচে থাকা সেই বিধবা মা নাসরিন আক্তার আর নেই। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি’) ভোরে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ডের লালিয়ারহাট বাজারের পশ্চিম দিকে কবির কোম্পানির বাড়িতে মাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন মুস্তাকিম।
মোস্তাকিম বলেন, আম্মুকে গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ির ধর্মপুরে আনা হয়েছিল। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে আজাদি বাজার সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্থানে আব্বুর কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। মোস্তাকিমের আইনজীবী হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, মোস্তাকিমের মায়ের বাড়ি আমাদের হালদা নদীর পারের গুমানমর্দন গ্রামে। তার মা আমাকে বর্দা (ভাইজান’) বলে ডাকতেন। তার আচার ব্যবহার খুবই নরম প্রকৃতির ছিল। দীর্ঘদিন ধরে বিধবা নাসরিন আক্তার কিডনি ডায়ালসিসের দুর্বিষহ কষ্ট সহ্য করে আসছিলেন। একমাত্র অবলম্বন মোস্তাকিম প্রকাশ মোস্তাফিজকে কারামুক্ত করতে অসুস্থ শরীর নিয়ে আমাদের চেম্বারে এসে বসে থাকতেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার বিজ্ঞ আদালতে মোস্তাকিমের মামলার নারাজি শুনানির দিন ধার্য ছিল। মা এর ডায়ালাসিস খরচ নিয়ে মোস্তাকিমকে আর বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না। তার আম্মাজান তাকে নিয়ে আর কোনো দিন হাজিরাও দিতে আসবেন না। জানা গেছে, নাসরিন আক্তারের দুটি কিডনিই বিকল ছিল। সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাতে হতো তিনবার। আট বছর ধরে এভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করেন তিনি। একমাত্র অবলম্বন মাদ্রাসা পড়ুয়া ২২ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ মুস্তাকিম। তার টিউশনির টাকাতেই চলত নাসরিন আক্তারের ডায়ালাইসিসের খরচ।’
গত বছরের ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি এবং সরকারিভাবে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনের সড়কে কিডনি রোগী ও স্বজনদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মুস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকেসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর স্বজনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। পরে জামিন পেয়ে মোস্তাকিম বাদী হয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সিআইডি। তবে মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তারের পর থানায় নির্যাতনের অভিযোগকে নাটক বলে মন্তব্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন ওসি নাজিম। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, তার শরীরে ‘চোতরা পাতা’ লাগিয়ে আঘাতের সাজানো দাগ তৈরি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ আগস্ট পাচঁলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদারকে সিএমপির সিটিএসবির পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে বদলি করা হয়।’