যে দ্বীপে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ-গভীর রাতে ভয়ে সারা শরীর যেন হিম হয়ে আসে। এই বুঝি সর্বগ্রাসী নদী ভাসিয়ে নিয়ে গেল। সকালে ঘরের দরজা খুলে বাসিন্দারা আগে মেপে নেন পানি কতটা এগোল। পানি যার বাড়ির চৌকাঠ ছোঁবে তার জন্যই অপেক্ষা করছে সর্বনাশ। হয়ত আর একটা ভোর হওয়ার আগেই পুরো বাড়িটা গিলে খাবে নদী। এখানে পানি যতই এগোয়, ততই পিছোয় মানুষ। পানি আর বসতির অনুপাত এখানে স্থির নয়। নিয়তির হাতে সবটাই সঁপে দেন গৃহস্থরা।

মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভারতের ঘোড়ামারা দ্বীপকে ঘিরে আছে নদী-সমুদ্র। এক দিকে বটতলা, মুড়িগঙ্গা ও হুগলি নদী। অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর। সাগরদ্বীপে যাওয়ার সময়ে ডান হাতে পড়ে ঘোড়ামারা দ্বীপ। এক সময়ে সাগরদ্বীপেরই অংশ ছিল। সাগর ও ঘোড়ামারা দ্বীপের মাঝে ছিল ছোট্ট একটা খাল। সেই খাল এখন বেড়ে প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার চওড়া নদী হয়ে গেছে। আর ক্রমেই ক্ষয়ে নদীরগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে সে দ্বীপ। ঘোড়মারা ভাঙছে, ডুবছে, ক্ষয় হচ্ছে প্রতিদিন একটু একটু করে। এদিকে ধান আর পান-এই দুইয়ের জন্য বিখ্যাত ঘোড়ামারা। উর্বর ধান চাষের জমি আর বরোজ ভরা পানই বাসিন্দাদের গর্ব। তাই ভিটেমাটি হারালেও দ্বীপ ছাড়তে রাজি নন অনেকে।’

ঘোড়ামারার বাসিন্দা অরবিন্দ করক ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আগে সাগরদ্বীপের বাসিন্দা ছিলেন। তারপর ঘোড়ামারায় সংসার পাতেন। হাজার পাঁচেক মানুষের বাস এখানে। তবে দিন দিন ঘরগুলো খালি হচ্ছে। ভিটেমাটি ছেড়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে শহরে চলে যাচ্ছেন অনেকেই। ১৯৬০ সালে এখানে অন্তত পঁচিশ হাজার বসতি ছিল। এখন সংখ্যাটা পাঁচ হাজারে ঠেকেছে।

অরবিন্দ বলেন, বুড়োরা ভিটে আগলে থাকলেও নবীনরা কেউ থাকতে চায় না ঘোড়ামারায়। আর থাকবেই বা কেন, এখানে কেউ মেয়ের বিয়ে দিতে চায় না। কবে কার ঘর ভাসিয়ে নিয়ে নেবে তা তো বলা যায় না। ঘোড়ামারার ছেলেদের কেউ জামাই করতে চায় না। এখানকার মেয়েদেরও বিয়ে হয় অন্য গ্রামে। প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, ঘোড়ামারা ভাঙছে দ্রুত। এখন আদখাওয়া পাঁউরুটির মতো আকৃতি হয়েছে দ্বীপের। কোনদিন যে সব ডুবে যাবে। ঘোড়ামারার দক্ষিণে ছিল লোহাচরা। নদী গিলে খেয়েছে। একটু একটু করে পুরো দ্বীপটা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, ঘোড়ামারার দক্ষিণে আরও দু’টি দ্বীপ ছিল একসময়। লোহাচরা আর সুপারিভাঙাচরা। সমুদ্র এগিয়ে এসে ক্রমে গিলে খেয়েছে সেই দ্বীপদু’টিকে। দ্বীপের বাসিন্দারা কেউ ঘোড়ামারায় উঠে এসেছেন, কেউ চলে গেছেন অন্যত্র। বৃষ্টি হলে নদীর জল বাড়ে। তখন ভিটেমাটি ছেড়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিতে হয়।

বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এভাবে বাঁধ ভাঙতে ভাঙতে খুব ঘোড়ামারাও তলিয়ে যাবে সমুদ্রের গ্রাসে। বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় গত কয়েকবছর ধরেই কমছে দ্বীপের জনসংখ্যা।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির পর শান্ত থানচি, সতর্ক পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বান্দরবানের থানচিতে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবির ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল)

স্মৃতিসৌধে হঠাৎ অসুস্থ মির্জা ফখরুল, নেওয়া হয়েছে সিএমএইচ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরে সেখান থেকে

সিরাজগঞ্জে র‌্যাব-১২ এর অভিযানে ৬১ কেজি গাঁজাসহ আটক ৪

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মহাসড়কে র‌্যাব-১২ এর বিশেষ অভিযানে ৬১ কেজি গাঁজাসহ চার মাদক ব্যাবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। অভিযানে দুটি প্রাইভেট কার, নগদ টাকা

ঘোর অন্ধকারে হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, মোদির সব চেষ্টাই ব্যর্থ!

ডেস্ক রিপোর্ট: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। তারপরও মাঝেমধ্যে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কথা বলেন, ফিরতে চান রাজনীতিতে। কিছু আবেগী নেতাকর্মীও

চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর উপর জঙ্গি সংগঠন ইসকনের হামলার প্রতিবাদে বাঁশখালীতে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম নগরীর হাজারি গলিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ইসকন সদস্যদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদে বাঁশখালীতে

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রীর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের ব্রজবালা মুরুটিয়া গ্রামে স্বামীর ছুরিকাঘাতে রুমানা খাতুন (২১) নামের এক গৃহবধূ নিহত হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী