নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল যুক্তরাজ্যের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে যে সমস্ত আগাম জরিপ প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে ঋষি সুনাকের ভরাডুবি অত্যাসন্ন বলেই মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর লেবার পার্টি ব্রিটেনের সরকার গঠন করতে পারে এমন আভাসও দেখা যাচ্ছে। তবে এ সব পূর্বাভাসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি রয়েছে সবার।
বাংলাদেশে এই নির্বাচন নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের নির্বাচনের দিকে যেমন আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় রাজনৈতিক দল তাকিয়ে ছিল। এবার যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের দিকেও প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল নজর রাখছে। নানা কারণে এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত কনজারভেটিভ পার্টি পরাজিত হয় এবং লেবার পার্টি সরকার গঠন করে তাহলে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সে দেশে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়বে।’
ইতিমধ্যে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন। যদি লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয় জটিল হয়ে পড়বে। কারণ লেবার পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া এবার লেবার পার্টি থেকে যারা নির্বাচন করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম রয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিকি। এই নির্বাচনে যদি লেবার পার্টি সরকার গঠন করে তাহলে টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ লেবার পার্টির ছায়া ক্যাবিনেটে টিউলিপ সিদ্দিকী ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লেবার পার্টিতে তার প্রভাব অনেক বেশি৷’
তাছাড়াও লেবার পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর বিশ্বে যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা ব্রিটেন থেকে শুরু হয়েছিল। এবং শেখ হাসিনার পক্ষে সেসময় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে যারা দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরা প্রায় সবাই লেবার পার্টির এমপি।
আর এবারও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটেনের কাছ থেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত তারেক জিয়াকে ফেরত চাইছেন। আর এক্ষেত্রে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসলে ফিরিয়ে আনার পথ অনেক সহজ হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য ফাস্ট ট্র্যাক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আর এই চুক্তির আওতায় বেশ কিছু অভিবাসীদেরকে ফেরত পাঠানো হয়েছে’।
কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার একটি গোপন সম্পর্ক রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। বিশেষ করে যেসমস্ত পাকিস্তান বংশোদ্ভূত ব্যক্তি রয়েছেন তাদের একটি প্রভাব কনজারভেটিভ পার্টিতে রয়েছে। এই কারণেই তারেকের সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ এবং সেখানে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা সহজ হচ্ছে।
সেখানে যদি সরকার পরিবর্তন হয় এবং লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারেক জিয়ার সাথে এই সম্পর্কের ইতি ঘটবে বলে অনেকে মনে করছেন। তারেক জিয়া এবং তার অনুগত বাহিনীরা টিউলিপ সিদ্দিকীকে নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য একধরনের প্রচারণা করছে। যেটি লন্ডনে বাঙালীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কারণ লন্ডনে দলমত নির্বিশেষে বাঙালি অভিবাসীদের পক্ষে সবাই একাট্টা। এখানে তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দেখতে চায় না। কিন্তু তারেক জিয়া বাঙালিদের মধ্যেই বিভক্তি সৃষ্টির মতো ন্যাক্কারজনক কাজ করছেন এবং টিউলিপ সিদ্দিকীর নির্বাচনী এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকী বিরোধী প্রচারণা করা হচ্ছে। যদিও এই প্রচারণা হালে পানি পায়নি। কারণ ব্রিটিশ নাগরিকরা তারেক জিয়ার এই কুৎসিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকে মোটেও আমলে নিচ্ছে না। আর এ বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল কি হয় সেটির উপর তারেক জিয়ার থাকা না থাকা অনেকটাই নির্ভর করছে। একারণেই এ নির্বাচন বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করছে।’