আপনার জানার ও বিনোদনের ঠিকানা

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সাজা শেষ হলেও দেশে ফিরতে পারছেন না ৪০ বিদেশি বন্দি

জেমস আব্দুর রহিম রানা: আইনী জটিলতার যাঁতাকলে পড়ে অপরাধের সাজা শেষ হলেও দেশে ফিরতে পারছেন না যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ৪০ জন বিদেশি বন্দি। দিনের পর দিন মুক্তির প্রহর গোনা এই বন্দি নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফিরতে না পেরে মানবতার জীবনযাপন করছেন।

বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যশোর শহরে প্রবেশ করেন ভারতের ওয়েস্টবেঙ্গল রাজ্যের রায়পুরের পালরী গ্রামের বাসিন্দা রাজ কুমার (৪৫)। চলাচলের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়াতে ২০১৪ সালের ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে রাজ কুমারকে আটক করে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ।

পরের দিন ২৯ জুলাই তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ‘দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট’ ১৯৭৩ আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ এনে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ওইদিন যশোর জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার এবং অতীতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ না থাকায় আদালত রাজ কুমারকে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরিমানা দেন।

আদালতের রায় অনুযায়ী তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে ওই বছরের ৩ এপ্রিল। তারপরও সাড়ে ৯ বছর ধরে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। দিনের পর দিন মুক্তির প্রহর গোনা এই বন্দি নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফিরতে না পেরে মানবতার জীবনযাপন করছেন।

রাজ কুমারের মতো যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ৪০ বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। যারা বিভিন্ন মেয়াদের সাজা শেষ করেও দেশে ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে ৩৯ জন ভারতীয় আর একজন নেপালের।

তারা অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা-যাওয়ার সময় বিজিবি ও পুলিশের হাতে আটক হন। এতে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। ভারত ও নেপাল সরকারের সদিচ্ছার এসব বন্দিরা নিজ দেশে ফিরতে পারছে না ভাষ্য সংশ্লিষ্টদের।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৮ জুন যশোরের চৌগাছা থেকে ৪৯ বিজিবির একটি দল টহল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে পবন কৃষ্ণকে আটক করে। ওই দিনই মামলা করে তাকে চৌগাছা থানায় সোপর্দ করা হয়। পরদিন পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে বর্ডার কন্ট্রোল এন্ট্রি অ্যাক্ট-এর ৪ ধারা অভিযোগে অভিযোগপত্রসহ আদালতে প্রেরণ করে। আদালত তাকে ৬ মাসের সাজা দেন।

রায় অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর তার সাজা শেষ ছিলো। কিন্তু আজও তিনি নিজের দেশে ফেরার অপেক্ষায় কারাগারে অবস্থান করছেন। আইনি জটিলতায় তার কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। একই অবস্থা ভারতীয় পুলিশ স্টেশন পাকনা এলাকার মোহনের (৩৭)।

কিছু মানসিক ভারসাম্যহীন এই বন্দি কারা কর্তৃপক্ষের নিকট স্বজনদের পরিচয় বলতে পারেননি। সাজা শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন কারাগারে থাকাতে তিনি স্মৃতিশক্তির সমস্যায় পড়েছেন।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিদেশি এই বন্দিরা সবাই বিনা পাসপোর্টে অনুপ্রবেশের দায়ে এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক হয়েছিলেন। এরপর আদালতের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ করেছেন। বন্দিদের বেশির ভাগ কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। লেখাপড়া জানেন না। পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। যে কারণে তারা তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কি করতে হবে, তাদের পরিবারের লোকজনের জানা নেই। মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে এখনো কেউ তাদের পক্ষে দাঁড়ায়নি।

এছাড়া এসব বন্দিরা অধিকাংশই বাংলা ভাষা বোঝেন না। ফলে অসহায়ের মতো তারা কারাগারে আটক রয়েছেন। আবার এসব বন্দিদের মুক্তি দিতে না পেরে কারা কর্তৃপক্ষও বিপাকে রয়েছেন। তাদের থাকা, খাওয়া-চিকিৎসা সেবার ব্যয় মেটাতেও সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে। পরিবারে ফেরার জন্য তাদের আকুতি পৌঁছায় না তাদের নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায়ই জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও জেলা লিগ্যাল এইড সভায় বিষয়টি নিয়ে উপস্থাপন করা হয়। প্রতি তিন মাস পর পর এসব বন্দিদের বিষয়ে প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠাচ্ছেন তারা।

আবার একই সাথে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়কের কাছে (সর্বশেষ ৬ মার্চ) চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবির কাছ থেকে এখনো কোন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ‘একজন মানুষের অপরাধের সাজা শেষ হওয়ার পরেও সাজা ভোগ করছে এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তবে বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র ও ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি। তাদের প্রতিনিধিও এসেছে। কিন্তু বেশির ভাগ বন্দিরা মানসিক ভারসাম্যহীন। ঠিকানা বলতে পারে না। তার পরেও ভারতীয় সরকার এবং আমাদের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটি দ্রুত উদ্যোগ নেয় তা হলেই এদের ফেরানো সম্ভব।’

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলর শরিফুল আলম বলেন, ‘সাজা শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন হাজতবাস করাতে তারা কিছুটা মানসিকভাবে অসুস্থ। বিষয়টি নিয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। আইনি কিছু জটিলতার কারণে তারা ছাড়া পাচ্ছেন না। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ তিনজনের বিষয়ে যশোর বিজিবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোন উত্তর পায়নি।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সর্বশেষ কারাগার কর্তৃপক্ষ বিএসএফকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছে। এসব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা তৎপর আছেন বলে জানান তিনি।’ আর এই বিষয়ে ৪৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমেদ জামিল চৌধুরী জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠকে ১০ সমঝোতা স্মারক সই

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি সমঝোতা নবায়ন করা হয়েছে৷’

ঢাবির ক্যান্টিনে খাসির গোশতের সঙ্গে রান্না হয় দশ টাকার নোট

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের নিম্নমানের খাবার নিয়ে যেন বিতর্ক থামছেই না। কখনো পচা মাছ, কখনো পচা মাংস আবার কখনো খাবারে পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন

‘জার্মানি সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী’

নিজস্ব প্রতিবেদক: জার্মানি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগদান ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর।

২ কোটি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করল গুগল

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস; গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ২ কোটিরও বেশি চ্যানেল ব্যান বা নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে বড় একটি সংখ্যা ভারতের। এছাড়াও প্ল্যাটফর্মটি

বেনজীরের পাসপোর্ট জালিয়াতি: আট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ, ৭টি অবৈধ পাসপোর্টের সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের পাসপোর্ট করতে নজিরবিহীন জালিয়াতি করেছেন এমন অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এজন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আট কর্মকর্তাকে

ইসরায়েল থেকে ঢাকায় ফ্লাইট: যে ব্যাখ্যা দিলো বেবিচক

ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব থেকে সম্প্রতি সরাসরি ঢাকায় দুইটি ফ্লাইট অবতরণ করে। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বেবিচকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ)