জেমস আব্দুর রহিম রানা: যশোরে এক হাজার ২৮৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৫০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদমিনার রয়েছে। বাকি এক হাজার ৩৯ টিতে শহিদমিনার নেই। যেসব বিদ্যালয়ে শহিদমিনার নেই সেখান শিক্ষার্থীদের কলাগাছ, কাঠ অথবা মাটি দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহিদমিনার কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের শহিদমিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। এ নিয়ে নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্য রয়েছে বোদ্ধাদের মধ্যে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যশোরের আট উপজেলায় মোট এক হাজার ২৮৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৫০, চৌগাছায় ১৩৯, ঝিকরগাছায় ১৩১, কেশবপুরে ১৫৮, শার্শায় ১২৫, অভয়নগরে ১১৭, মণিরামপুরে ২৬৭ ও বাঘারপাড়ায় ১০২ টি।
তথ্যানুযায়ী, সদর উপজেলায় ২৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৪, চৌগাছার ১৩৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮, ঝিকরগাছার ১৩১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯, কেশবপুরের ১৫৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭, শার্শার ১২৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪, অভয়নগরের ১১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৩, মণিরামপুরের ২৬৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮৫ ও বাঘারপাড়ার ১০২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০ টিতে শহিদমিনার রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয়ভাবে অনুদান সংগ্রহ করে শহিদমিনার নির্মাণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরজন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। আর শিক্ষকরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে অনুদান সংগ্রহ করা কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া, একটি শহিদমিনার নির্মাণে কয়েক হাজার টাকা দরকার। যা কোনোভাবেই স্থানীয়ভাবে জোগাড় করা সম্ভব না।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন খাতে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। যার একটি বড় অংশ লুটপাট হয়ে যায়। বহু স্কুলে এসব খাতের টাকার একটি অংশ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আর প্রধান শিক্ষকরা ভাগাভাগি করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও কোনো কোনো স্কুলে বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওইসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সততা আর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে এটি সম্ভব হয়।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার ভবন নির্মাণ করছে। অনেক স্কুলে অহেতুক ভবন করা হচ্ছে। অথচ শহিদমিনার নির্মাণ করে দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমিরুল আলম খান বলেন,‘প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে চলে। এ কারণে শহিদমিনার নির্মাণের দায় একেবারেই সরকারের। সরকারি উদ্যোগেই শহিদমিনার হওয়া উচিত।’
যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, শহিদমিনার নির্মাণে কোনো বরাদ্দ নেই। আর স্থানীয়ভাবে হাজার হাজার টাকা জোগাড় করে শহিদমিনার নির্মাণ করা অসম্ভব ব্যাপার। একমাত্র সরকারি অর্থায়নে ছাড়া সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদমিনার নির্মাণ সম্ভব না।’
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদমিনার থাকা জরুরি। কিন্তু সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় তা হচ্ছে না। যেগুলোতে আছে সেগুলো স্থানীয়ভাবে করা হয়েছে। শহিদমিনারের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকলে ভালো হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, শহিদমিনার নির্মাণে সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় অনেক স্কুলে তা নেই। তারপরও সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্থানীয়ভাবে অর্থ জোগাড় করে শহিদমিনার নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
গোটা বিশ্বে ভাষার জন্য জীবনদানের নজির একমাত্র বাংলাদেশে। আর শহিদমিনার ভাষা শহিদদের জীবনদানের স্মৃতি চিহ্ন।। ভাষা আন্দোলনের রক্তরাঙা পথ ধরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। মাত্র নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়য় তার অনুপ্রেরণা ছিল ভাষা আন্দোলন। সেই ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহিদমিনার স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণ না হওয়া দুঃখজনক বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ।