জেমস আব্দুর রহিম রানা: অধিক মুনাফার আশায় মজুতের মাধ্যমে চালের বাজার যাতে কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে সেই লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে যশোর খাদ্য বিভাগ। কেবল মাঠে নামেনি, রীতিমতো সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত নয়দিনে এক লাখ তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। নতুন করে লাইসেন্সের আওতায় আনা হয়েছে ৪৩ টি রাইসমিলকে। যেসব রাইসমিল মালিক এতদিন অবৈধভাবে ব্যবসা করছিল।
বছরের শুরুতে যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে একটি সিন্ডিকেট। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের চালের দামও বাড়িয়েছে তারা। গড়ে তুলছে অবৈধ মজুত। এসব রুখতে মাঠে নেমেছে খাদ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলার খাদ্য বিভাগকে মজুত বিরোধী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে।’
যশোরে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত নয়দিনে পাঁচটি উপজেলায় অভিযান চালিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ। এই পাঁচটি উপজেলায় মোট ১৭ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এরমধ্যে মণিরামপুরে চারটি, অভয়নগরে একটি, ঝিকরগাছায় দু’টি, শার্শায় পাঁচটি, বাঘারপাড়ায় তিনটি ও চৌগাছায় দু’টি অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় ৪৩ টি রাইসমিলকে নতুন করে লাইসেন্স গ্রহণে বাধ্য করে দপ্তরটি।
জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যশোরে সর্বমোট ১০২ টি রাইসমিল রয়েছে। এরমধ্যে ২৪ টি অটো রাইসমিল। বাকিগুলো হাস্কিং। খাদ্য বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী, একজন খুচরা ব্যবসায়ী ১৫ মেট্রিকটন চাল ১৫ দিন পর্যন্ত তার গুদামে রাখতে পারবেন। পাইকারি ব্যবসায়ী ৩০০ মেট্রিকটন চাল রাখতে পারবেন ৩০ দিন। আর মিল মালিকরা ৩০ দিন পর্যন্ত ছাটাই ক্ষমতার তিন গুণ চাল রাখতে পারবেন। এভাবে রাখলে সেটি মজুতের পর্যায়ে পড়বে না। এর বাইরে যা করবে তা অবৈধভাবে মজুতের পর্যায়ে পড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যশোরে এক হাজারের মতো রাইসমিলের লাইসেন্স রয়েছে। পাইকারি বিক্রেতা হিসেবে লাইসেন্স পেতে পাঁচ হাজার টাকা ফি জমা দিতে হয়। আমদানিকারকদের ১০ হাজার এবং খুচরা বিক্রেতাদের এক হাজার টাকা ফি দিয়ে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, লাইসেন্স ছাড়া যশোরে চালের ব্যবসা করা যাবে না। প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে লাইসেন্সের আওতায় আসতে হবে। আর লাইসেন্স গ্রহণ করতে অভিযান অব্যাহত রাখবে খাদ্য বিভাগ। পাশাপাশি কেউ যাতে অবৈধভাবে মজুত গড়ে তুলতে না পারে সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন কর্মকর্তারা। যেকোনো মূল্যে অবৈধ মজুত বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু।’
তিনি জানিয়েছেন, চলতি আমন মৌসুমে যশোরে দু’দফায় ১৪ হাজার ৪৬৭ মেট্রিকটন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রথম দফায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ হাজার ২০ মেট্রিকটন। এরপর অতিরিক্ত বরাদ্দ আসে চার হাজার ৪৪৭ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ১২ হাজার ২৪০ মেট্রিকটন চাল।
এদিকে, ভোক্তারা যশোরের বড় বাজারের বিভিন্ন চালের দোকানে নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা যখন তখন চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে, চাপে পড়ছেন তারা। ভুক্তভোগীরা বড়বাজারের দোকানগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা বলছেন।
এসব বিষয়ে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন,‘যশোরে কোনোভাবেই কাউকে চালের মজুত করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের সুযোগ দেওয়া হবে না। একইসাথে চালের ব্যবসা করতে হলে তাকে অবশ্যই লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ চাল বিক্রি করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে।’