মুহিত-রিজভীর প্রস্তাব যেভাবে নাকচ করেছিলেন সাহাবুদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, সাহসিকতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার জন্য শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু আজ অহংকারের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে আনসাং হিরো হলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। সে সময় তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চেয়ারম্যানও ছিলেন না। তারপরও পদ্মা সেতু নিয়ে যে দেশে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তিনি ছিলেন প্রধান ব্যক্তি। তার এই সাহসিকতার কারণেই পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র ভেস্তে গিয়েছিল।

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং জাইকা অর্থায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। কিন্তু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তারা তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ আনে এবং বিশ্বব্যাংকের সাথে এডিবি এবং জাইকাও অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে। ফলে বাংলাদেশ একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এই অবস্থায় বিশ্বব্যাংক কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মদতে এবং প্ররোচনায় ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার করে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে ফিরে আসতে পারে, যদি দুর্নীতি দমন কমিশন এটি স্বাধীন এবং নির্মোহভাবে তদন্ত করে এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।

এটি যে গভীর ষড়যন্ত্রের একটি প্লট ছিল তা যারা সমঝোতা করেছিলেন তারা বুঝতেই পারেননি। সরকারের পক্ষ থেকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এই দেনদরবার করেছিলেন। অবশেষে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি আইনী টিম বাংলাদেশে আসে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করে।’

তদন্তের অংশ হিসেবে শুরুতেই কোনরকম অভিযোগ ছাড়াই মোশারফ হোসেনকে আটক করা হয়। মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেনকে। এসময় সৈয়দ আবুল হোসেনকেও গ্রেপ্তারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু সরকার বিশ্ব ব্যাংককে আশ্বস্ত করে যে, যদি তদন্তে প্রাথমিকভাবে তিনি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র যে কী ভয়ঙ্কর এবং ব্যাপক বিস্তৃত ছিল, তা প্রথমে কেউ অনুভব করতে পারেননি।

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সে সময়ে ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সদস্য। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে প্রাতঃরাশের জন্য তার বাসায় আমন্ত্রণ জানান। সকলকেই একই বক্তব্য দেন। বিশ্ব ব্যাংক যেভাবে বলবে সেভাবে তোমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে এবং সেই তদন্ত প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক যাদেরকে যাদেরকে অভিযুক্ত করে তাদেরকেই তোমরা অভিযুক্ত হিসেবে ঘোষণা করবে, তাহলেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন দিবে।

তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সহ সকলেই এই প্রস্তাব মেনে নেন। শুধু একজন ছাড়া। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে আলাদাভাবে ডাকা হয়। মজার ব্যাপার হল যে, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সকালে নাস্তার দাওয়াত দিয়েছিলেন। সবার শেষে তিনি যখন যান এবং নাস্তার টেবিলে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দেখতে পান সেখানে বসে আছেন গওহর রিজভী এবং আবুল মাল আবদুল মুহিত। তারা তৎকালীন দুদকের কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে বলেন যে, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তদন্ত রিপোর্ট দিতে হবে এবং সেখানে সৈয়দ আবুল হোসেনকে অভিযুক্ত করতে হবে এবং এই অভিযোগকারীদের তালিকায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যের নামও থাকবে। এখানে কিছু করার নেই। যেহেতু বিশ্ব ব্যাংকের টাকা প্রয়োজন সেহেতু এটি দিতেই হবে।’

কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৭৫’র প্রতিরোধ যোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাৎক্ষণিকভাবে নাস্তার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ান। তিনি বলেন যে, আমি দরকার হলে পদত্যাগ করব। কিন্তু এ ধরনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মাথা নোয়াবো না। তিনি মুহিতের প্রস্তাব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুদকের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রায় একাই কথা বলেন তিনি। একসময় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, আইনে পরিপক্ক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন যুক্তিতর্ক দিয়ে বিশ্বব্যাংককে বুঝিয়ে দেন যে, অনুমান নির্ভর এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কাউকে অভিযুক্ত করা যায় না। আইন নির্মোহ এবং নির্মোহভাবেই তদন্ত করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দালিলিক প্রমাণ না পাওয়া যাবে, কাউকে অভিযুক্ত করা যাবে না এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজের ব্যাপ্তি এবং স্বাধীনতা সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন বেআইনিভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করবে না। আইনের মধ্যে থেকে যদি কেউ অন্য দোষী হয় অবশ্যই বিচার করবে।

দুদকের স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তে দেখা যায়, পদ্মা সেতুতে কোনও ষড়যন্ত্র হয়নি। সেদিন যারা বিশ্ব ব্যাংকের পদলেহন করে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন, তারা পরবর্তীতে নিশ্চয়ই অনুতপ্ত হয়েছেন। কিন্তু মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সেদিন যদি রুখে না দাঁড়াতেন তাহলে পদ্মা সেতু আজকের বাস্তবতায় হতো কি না তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সেই ভূমিকা ইতিহাসে অমরত্ব পাবে। এই পদ্মা সেতুতে তিনি একজন আনসাং হিরো।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

হঠাৎ করে উধাও হচ্ছে টুইটার অ্যাকাউন্ট’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের হাতে যাওয়ার পরই টুইটারে আসছে নানা পরিবর্তন। এরপর থেকেই কমছে টুইটারের ব্যবহারকারীর সংখ্যা। উধাও হচ্ছে বেশকিছু অ্যাকাউন্ট। ভুয়া

সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে ফরিদুল নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে, সোমবার দুপুর সারে ১২ টার দিকে ঢাকা-বনপাড়া মহাসড়কের হাটিকুমরুল পুরাতন মাছের আড়তের

দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সারজিস আলম…সর্বশেষ যা জানা গেল

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: সম্প্রতি,“৩২ কোটি টাকা ইস্যুতে গ্রেফতার সমন্বয়ক রাফি, দেশ ছেড়ে পালালো সারজিস আলম” শীর্ষক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীর স্কুলব্যাগ থেকে বইয়ের সাথে বেরুলো পিস্তল, স্কুলজুড়ে আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: স্কুলের ব্যাগে সাধারণত বইখাতা, টিফিন কিংবা পানির বোতল থাকার কথা। তবে সেই ব্যাগে পিস্তল থাকার কথা শুনেছেন কখনো? এবার এমনই এক অবাক করা

বেলকুচিতে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন

সলঙ্গায় বিএনপি পরিচয়ে জোরপূর্বক পুকুরের যায়গা দখলের অভিযোগ 

জুয়েল রানা: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার ধুবিল ইউনিয়নের মালতীনগর এলাকায় জোরপূর্বক ভাবে ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে অফাল উদ্দিন নামের একজনের বিরুদ্ধে। আফাল উদ্দিন (৩০) মালতীনগর এলাকার