সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জে ঘুষ নিয়ে গোপন পরীক্ষার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার গোন্তা আলিম মাদ্রাসা চার প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ১১ জনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলায় জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাপরিচালক ও পরিচালককেও বিবাদী করা হয়েছে।’
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে তাড়াশ সহকারী জজ আদালতের পেশকার মুনতাসীন মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিচারক মো. লোকমান হাকিম মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীদের ৩০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দিয়েছেন। আজই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২২ জানুয়ারি’) ওই আদালতে মামলাটি দায়ের করেন প্রার্থী হাদিউল ইসলাম, জয় ইসলাম ও ফাতেমা খাতুন নামে তিন চাকরি প্রার্থী।
মামলার আসামিরা হলেন-গোন্তা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ টি. আর আব্দুল মান্নান, সভাপতি আতিকুর রহমান, তাড়াশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবু নাঈম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের গাবরগাড়ি গ্রামের মো. সেলিম রেজা, লাউতা গ্রামের সাগর ও স্বপ্না খাতুন।
মামলার এজাহারে বাদীরা উল্লেখ করেন, গোন্তা আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী এবং আয়া- এ চারটি পদের জন্য গত বছরের ২৭ জুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন পদে যথানিয়মে আবেদন করেন।
গত ২১ জুলাই তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। পরে অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষাটির আগের দিন পরীক্ষা স্থগিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছিরেন তারা। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার পরও নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এ অবস্থায় একাধিক প্রার্থী চাকরির জন্য টাকা দিয়েও প্রতারণার শিকার হন। পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন কীটনাশক পান করেন এবং অপর এক প্রার্থী পরীক্ষার হলেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ’) মোহাম্মাদ আবু নঈম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে চলে যান।
পরে পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তনের জন্য ৩ ডিসেম্বর তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মাধ্যম করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেন অধ্যক্ষ টি. আর আব্দুল মান্নান। ৪ ডিসেম্বর এক চিঠিতে সুপারিশ করেন ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি আতিকুর রহমান মিলে অবৈধভাবে অন্য কোনো প্রার্থীকে প্রবেশপত্র না দিয়ে গোপনে ২৯ ডিসেম্বর ওই চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করে বিল দেওয়ার জন্য মাদ্রাসা অধিপ্তরে পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ নিয়োগের বিষয়ে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছিল। যখনই আমার কাছে অভিযোগ এসেছে, আমি তদন্ত করতে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেব। ওইটার ম্যানেজিং কমিটি বা নিয়োগ কমিটি কোনোটিতেই আমি নেই।’
জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার নামে মামলার বিষয়টি আপনার কাছেই শুনলাম। মামলা কে কি কারণে করেছে, সেটা তো আমার জানা নেই। এটা নিয়ে কি বলব’?