নিজস্ব প্রতিবেদক: ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার শতবর্ষী পুরোনো জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া কওমি মাদ্রাসার মুহতামিমের (অধ্যক্ষ) বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ চেয়েছেন ধর্মভিত্তিক শিক্ষালয়টির শিক্ষকরা। মুহতামিমের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ এনে সম্প্রতি মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির (শুরা কমিটি’) কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের ৪৮ জন শিক্ষক।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগে আর্থিক, প্রশাসনিকসহ নানা খাতে মোট ২৯টি অনিয়ম তুলে ধরা হলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তবে এসব অভিযোগ তদন্ত না করেই পুনরায় দ্বিতীয়বারের মতো মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনকে মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির শূরা কমিটির বিরুদ্ধে।
আমি মুঠোফোনে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে পারবো না। কমিটির পক্ষ থেকে নিষেধ আছে-মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিন, মুহতামিম, জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া কওমি মাদ্রাসা।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বালিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালে জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া কওমি মাদ্রাসায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনকে। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আবারও মুহতামিম হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রথম নিয়োগের পর আরও প্রায় দুই মাস চাকরির মেয়াদ থাকলেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তড়িঘড়ি করে মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনকে নিয়োগ দেয় শুরা কমিটি। এর আগে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় মাদ্রাসার মজলিসে শুরা কমিটির কাছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ৪৮ জন শিক্ষক মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, মাদ্রাসার নামে রসিদ ছাড়াই টাকা তোলা, মাদ্রাসার টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে খরচ, শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখা, প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে ফলের বাগান করে কয়েক লাখ টাকা খরচ দেখানো, মাদ্রাসার অর্থ নিজের ব্যবসার কাজে লাগানোসহ নানা অনিয়ম করেছেন মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিন।
এছাড়াও মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, অডিট প্রতিবেদন গোপন করা, স্বাক্ষর ছাড়াই বিল-ভাউচার করা, ছুটি না নিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, মাদ্রাসার অফিসকে হজ কাফেলার অফিস হিসেবে ব্যবহার এবং কাফেলার পেছনে মাদ্রাসার অর্থ ব্যয়সহ মোট ২৯টি অভিযোগ স্ববিস্তারে জানানো হয়েছে একই চিঠিতে।
শুরা কমিটি এবং বর্তমান মুহতামিম মিলে ঐতিহ্যবাহী এ মাদ্রাসাকে ধ্বংস করছেন বলে মনে করেন শিক্ষালয়টির শুরা কমিটির সাবেক সদস্য আমির উদ্দিন তালুকদার। তিনি বলেছেন, যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে-তা শতভাগ সত্য। শুরা কমিটি এবং বর্তমান মুহতামিম মিলে এসব অনিয়ম করছেন।
সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয় জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া কওমি মাদ্রাসার শুরা কমিটির (গভর্নিং বডি) সহ-সভাপতি ইকরাম তালুকদারের কাছে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আমরা অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল আমাদের সভা রয়েছে। সেখানে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারি। এরপর বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করে সিদান্ত গ্রহণ করা হবে।
যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে-তা শতভাগ সত্য। শুরা কমিটি এবং বর্তমান মুহতামিম মিলে এসব অনিয়ম করছেন-আমির উদ্দিন তালুকদার, সাবেক সদস্য, শুরা কমিটি, জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া কওমি মাদ্রাসা
আর বালিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মোখলেছুর রহমান মণ্ডল বলছেন, যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে-সেগুলোর সত্যতা রয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে বিষয়গুলো নিয়ে মুঠোফোনে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন গণমাধ্যমে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে তাঁকে মাদ্রাসার কমিটির পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
বিষয়টি ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে স্থানীয় উপজেলা এবং পুলিশ প্রশাসনকে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বালিয়া মাদ্রাসার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মাদ্রাসা কমিটির বৈঠক রয়েছে। আশা করছি, সেখান থেকে একটি সমাধান আসবে। প্রয়োজনে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।’