নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ দল এবং সরকার আলাদা করার কৌশল গ্রহণ করেছে। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে যারা দলীয় পদে থাকছেন, তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিকেই মন্ত্রীত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আবার মন্ত্রিত্ব পেলে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এরকম বেশ কয়েকজন নেতা আছেন, যারা দলীয় পদে ছিলেন। এরপর মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর পরবর্তী কাউন্সিলে তাদেরকে আর দলীয় পদে রাখেননি। খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একসময় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তাদেরকে আর দলীয় পদে রাখা হয়নি। হাতেগোনা কয়েকজনকে একই সাথে মন্ত্রিত্ব এবং দলীয় পদে রাখা হচ্ছে।
এবার নির্বাচনে দলীয় পদে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়লেও তা মন্ত্রিসভার মোট সদস্যের তুলনায় খুবই কম। এবার যারা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন এবং অতীতে দলীয় পদে ছিলেন তারা আবার দলীয় পদে ফিরতে আগ্রহী। আওয়ামী লীগ এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠান করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ নিয়মিত কাউন্সিল অনুষ্ঠানের একটি সংস্কৃতি চালু করেছে। সেই সংস্কৃতির ধারায় এবারও সময় মতো কাউন্সিল৷ হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। আর এর ফলে যারা মন্ত্রিত্ব পাননি, তারা এখন থেকে দলীয় পদ পাওয়ার জন্য আগ্রহ উঠেছেন এবং এজন্য তারা চেষ্টা তদবির শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।’
বিভিন্ন বলছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের হ্যাটট্রিক করেছেন। তিনি আবার সাধারণ সম্পাদক হবেন এটি কেউ চিন্তা করে না। এমনকি ওবায়দুল কাদের নিজেও আবার সাধারণ সম্পাদক হতে চান কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ তার ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেছেন জীবনের সব চাওয়া পাওয়া তার পূর্ণ হয়েছে। এ বার নাটকীয় কিছু না ঘটলে আওয়ামী লীগ একজন নতুন সাধারণ সম্পাদক পাবে। আর সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে গত কয়েকবারে আলোচনায় ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। এবার তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর এ কারণেই তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার পক্ষে একটি লবি কাজ করছে। তবে ড. রাজ্জাকের নির্বাচনের আগে বিতর্কিত বক্তব্যের পর তিনি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন কী না এ নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। তবে আব্দুর রাজ্জাক গত দুটি কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচিত প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন।
টিপু মুনশি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। গত বারের মন্ত্রিসভায় তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এখন তিনি আবার নতুন করে দলের কেন্দ্রীয় পদ পেতে আগ্রহী বলেই তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে। এখন দেখার বিষয় টিপু মুনশির ভাগ্যে দলীয় পদ জোটে কি না।’
শ. ম রেজাউল করিম আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি মন্ত্রিত্ব পেলে দলের কাউন্সিলে কেন্দ্রেীয় নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়েন। আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার জন্য তিনি একজন যোগ্য প্রার্থী। এই পদে তিনি ফিরে আসতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
ড. আবদুল মোমেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে কোন সময়ই ছিলেন না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ঘনিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার তিনি প্রেসিডিয়ামে বা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রেীয় নেতৃত্ব আসতে চান।
এনামুল হক শামীম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সাবেক ছাত্রলীগের এই নেতা রাজনীতিবিদ হিসেবেই বেশি পরিচিত। গতবার তিনি উপমন্ত্রী হওয়ার কারণে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বাদ পড়েন। এবার দলে তিনি গুরুত্বপূণ পদে আসতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রিত্ব থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের অনেকেই দলীয় পদ পেতে আগ্রহী।’