আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি হিন্দু গোষ্ঠীর অভিযোগের পর বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত মহারাষ্ট্র রাজ্য কর্তৃপক্ষ ভারতে ৮০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক একটি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে।,
শনিবার (১৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএস-সংশ্লিষ্ট এক হিন্দু গোষ্ঠীর অভিযোগের পর বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত মহারাষ্ট্র রাজ্যের কর্তৃপক্ষ মুসলিম ইবাদতকারীদের জন্য ৮০০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে। মসজিদটি মহরাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে অবস্থিত।,
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কট্টরপন্থি সংগঠনের দায়ের করা অভিযোগের শুনানি করার সময় জেলা কালেক্টর আকস্মিকভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন এবং এতে করে জলগাঁওয়ের ঐতিহাসিক এই মসজিদটি হঠাৎ করেই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে প্রবেশ-অযোগ্য হয়ে উঠেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশে জেলা কালেক্টর ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করারও নির্দেশ দিয়েছেন। ৮০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটিকে ‘বিতর্কিত’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে তিনি তহসিলদারকে মসজিদের দায়িত্ব নিতে বলেন।,
দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, কালেক্টরের আদেশ এবং তা পাস করার ক্ষমতা বোম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এরপরও জুম্মা মসজিদ ট্রাস্টের সদস্য আসলাম আশঙ্কা করছেন, অভূতপূর্ব এই আদেশটি রাজ্যের আট শতাব্দী প্রাচীন মসজিদকে ঘিরে সাম্প্রদায়িকতার সূচনা করেছে।
প্রাচীন এই মসজিদকে নিয়ে কোনো বিতর্ক না থাকলেও সম্প্রতি ‘পাণ্ডবওয়াদা সংঘর্ষ সমিতি’ নামে একটি অনিবন্ধিত সংগঠনের অভিযোগের কারণে মসজিদটি হঠাৎ করেই বিতর্কের জায়গা হয়ে ওঠে। অভিযোগকারী ব্যক্তির নাম প্রসাদ মধুসূদন ডান্ডাওয়াতে।
গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জলগাঁও জেলা কালেক্টর আমান মিত্তালের কাছে এই মসজিদ নিয়ে একটি আবেদন করেন তিনি। এছাড়া অভিযোগকারী ডান্ডাওয়াতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল আরএসএস এবং বজরং দলের সদস্য।,
অভিযোগে তিনি দাবি করেন, মসজিদটি একটি হিন্দু উপাসনালয়ের ওপরে তৈরি করা হয়েছিল এবং রাজ্য কর্তৃপক্ষের সেটি দখল করা উচিত। অভিযোগকারী আরও দাবি করেন, জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট জায়গাটি ‘অবৈধভাবে’ দখল করেছে’।
১৯৯২ সালে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে দেশটিতে পাস করা একটি আইনে পুরোনো স্থাপনা বা স্মৃতিস্তম্ভগুলোর ক্ষতি বা পুনরুদ্ধার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে জুম্মা মসজিদ ট্রাস্টের সদস্যরা বলেছেন, তারা গত জুন মাসে একটি নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত এসব দাবি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ট্রাস্ট কমিটির অন্যতম অ্যাডহক সদস্য আসলাম বলেছেন,কালেক্টর শুনানি পরিচালনা করছিলেন। আর সীমিত সময়ের মধ্যে আমাদেরকেও আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। এবং গত ১১ জুলাই কালেক্টর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।’
সংবাদমাধ্যম বলছে, মসজিদের ট্রাস্ট কমিটির পাশাপাশি ওয়াকফ বোর্ড এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকেও (এএসআই) নোটিশ জারি করা হয়েছে। এএসআই মসজিদ ট্রাস্টের দাবিকে সমর্থন করে বলেছে, এটি একটি প্রাচীন কাঠামো। এতে বলা হয়, ১৯৮৬ সালে এএসআই এই স্থাপনার সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর থেকে মসজিদে নামাজ আদায় করা হচ্ছে।
এএসআই আরও বলেছে, মসজিদটি প্রাচীনকাল থেকেই মুসলমানদের জন্য একটি উন্মুক্ত এবং প্রবেশযোগ্য স্থান। বোর্ডের সিইও মইন তহসিলদার বলেছেন, কালেক্টর যে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছেন তা তার এখতিয়ারের বাইরে এবং এই ধরনের আদেশ ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের আইনি এখতিয়ারও লঙ্ঘন করেছে।