নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতে এখন লোকসভা নির্বাচন চলছে। এই লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ৪ জুন জানা যাবে নতুন সরকার কারা গঠন করছে। নির্বাচন নিয়ে চলছে অনিশ্চয়তা। বিজেপির কপালে ভাঁজ। কিন্তু এর মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা সফরে আসছেন। দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানাতেই বিনয় মোহন কোয়াত্রার এই বাংলাদেশ সফর বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিনয় মোহন কোয়াত্রা তার বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী আগামী জুলাই মাসে ভারত সফরে যেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। আর এটি হলে নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জয়ী হওয়ার পর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হবে ভারতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এমন এক সময় যখন ভারতে নির্বাচন চলছে। নতুন সরকার কারা গঠন করবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা রয়েছে। সাধারণত নির্বাচনকালীন সময়ে ভারত এরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। নির্বাচনের পর নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কাকে তারা আমন্ত্রণ জানাবে এবং পররাষ্ট্র নীতির কলাকৌশল কী হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ ভারতে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না। বিনয় মোহন কোয়াত্রার বাংলাদেশ সফর এই বার্তাটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করেছে’।
ভারতে ইন্ডিয়া জোট বা এনডিএ জোট যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে গত এক যুগে যে সম্পর্কের অগ্রযাত্রা সেটিকে দুই পক্ষই অব্যাহত রাখতে চায়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরের মধ্য দিয়ে সেটি সুস্পষ্ট করা হল’।
জুনের ৪ তারিখে নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন।
ভারত কতগুলো বিষয়ে রাজনৈতিক বিরোধের বাইরে অবস্থান গ্রহণ করে। বিশেষ করে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি এমন একটি অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, পররাষ্ট্র নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন তারা করে না। আর এ কারণেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যাচ্ছেন।
নানা কারণে বাংলাদেশের ওপর ভারত অনেকখানি নির্ভরশীল। সবচেয়ে বড় কারণ হল যে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় ভূমিকা। বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চল অতীতে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত। কিন্তু ২০০৯ সালে দায়িত্বগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনদিন কোন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হবে না এবং ঘাঁটি হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতেও দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে তিনি শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেন।
এছাড়াও অসাম্প্রদায়িক চেতনা জঙ্গিবাদ মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান ভারতকে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল করেছে। এ কারণেই বিগত নির্বাচন গুলোতে ভারত সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এ অঞ্চলের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা যে গুরুত্বপূর্ণ এই বক্তব্যটি ভারত কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই দিয়েছে। এটির পিছনে প্রধানত ভারতের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপদ্রব বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের কারণে অনেক খানি কমে গেছে। আর এ কারণেই ভারতের ক্ষমতায় যারাই আসুক না কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা সম্পর্কের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে। এই বার্তাটি দিতেই বিনয় মোহন কোয়াত্রা ঢাকায় আসছেন।’