বাংলা পোর্টাল: মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে ঠিকই কিন্তু সর্বস্তরে এখনাে বাংলা ভাষার ব্যবহার কাগজ-কলমেই রয়ে গেছে। সাংবিধানিকভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রে এখনো উপেক্ষিত মাতৃভাষা বাংলা। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে চরমভাবে অবহেলিত বাংলা ভাষা।
ব্যাংকিং খাতে ইংরেজি ভাষার দাপট চলছে যুগের পর যুগ ধরে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সহ দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে ইংরেজি ভাষায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বরং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটিতেও চরমভাবে উপেক্ষিত বাংলা। অধিকাংশ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়ে থাকে ইংরেজিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ৬১টি ব্যাংকের অধিকাংশ ব্যাংকই বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের। এছাড়া আমানতকারীদের মধ্যে বাঙালি গ্রাহকের সংখ্যাই বেশি। শুধু তাই নয়, যারা এই খাত থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তারাও শতভাগ বাংলাদেশি। অথচ ব্যাংক খাতের যাবতীয় দালিলিক কর্মকাণ্ড চলছে ইংরেজি ভাষায়। কোটি কোটি গ্রাহককে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি কাগজে সই করতে হচ্ছে।’
ব্যাংকের একাউন্ট খোলা জন্য যে ফরম পূরণ করতে হয় তার কোথাও বাংলার কোনো স্পর্শ থাকে না বরং ইংরেজিতেই পূর্ণ। এছাড়াও ব্যাংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে এমন কোনো ফরম নেই যাতে বাংলার ব্যবহার রয়েছে। সবকিছুই হয় ইংরেজিতে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় এই ব্যাংকগুলো বাংলাদেশিদের জন্য নয় এরা বিদেশীদের জন্য ব্যাংকিং সিস্টেমটি পরিচালনা করছে।’
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা জরুরি হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি একেবারেই জরুরি নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ সব ধরনের লেনদেন, ডকুমেন্ট ও আদেশ-নির্দেশ বাংলা ভাষায় হওয়া উচিত। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকে সীমিত আকারে বাংলা ভাষার ব্যবহার চললেও বেশিরভাগ ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে ইংরেজিতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিভাগের নামই রাখা হয়েছে ইংরেজিতে।
ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটেরও একই অবস্থা। প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যাবতীয় তথ্য লেখা থাকে ইংরেজিতে। ব্যাংকের পরিচিতি, বিভিন্ন ঋণপণ্য ও আমানতের তথ্যও থাকে ইংরেজিতে। এটি আসলে কাম্য নয়। ব্যাংকিং খাতটি বাংলাদেশের একটি বড় খাত। এই খাতের সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষ। ফলে তাদের উচিৎ ধীরে ধীরে হলেও বাংলা ভাষায় ব্যবহার শুরু করা এবং বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়া।’