নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি গঠিত হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা। জাতীয় সংসদে এবার যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগই ব্যবসায়ী। কোটিপতির সংখ্যা অনেক বেশি। সুশাসনের জন্য নাগরিক যে জরিপ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ৯৪ শতাংশ সদস্যই ব্যবসায়ী। আর অন্যদিকে আমলাদের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। কিন্তু অন্যান্য সময় দেখা যায় সংসদে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি থাকলেও আমলারা মন্ত্রিসভায় বা সরকারের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে থাকেন। অনেক সময় মন্ত্রিসভায় আমলাদের দাপট না থাকলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে তারা থাকেন।
২০০৯ সালের পর থেকেই আমলারা ক্ষমতাকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন এইচ টি ইমাম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা হলেও বাস্তবে তিনি ক্ষমতাকেন্দ্রের দ্বিতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।’
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সরকারটি একটি রাজনৈতিক সরকার হিসেবে আবির্ভূত হয়। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিমের মতো হেভিওয়েট নেতারা সেই সময় আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিলেন। আমলাদের প্রভাব ক্ষমতাকেন্দ্রে কিছুটা কমেছিল বটে কিন্তু আবুল কালাম আজাদ এবং সাজ্জাদুল হাসানের মতো আমলাদের কারণে সেই সময়ও আমলাদের একটা নিশ্চিত প্রভাব বলয় ছিল।
২০১৮ সালের মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর পুরোপুরিভাবে আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমলারাই ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এর প্রভাব বেড়েছিল। এই সময় আমলাদের প্রভাব এতটাই পারে যে জেলার দায়িত্ব সচিবদেরকে দেওয়া হয়েছিল। যদিও বলা হয়, করোনার বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এটি করা হয়েছিল। কিন্তু এটি আমলাদের ক্ষমতা কেন্দ্র দখলের একটি উদাহরণ মাত্র। তবে এবার সরকারের নীতি নির্ধারকে আমলাদের অবস্থান খুবই দুর্বল। আমলাদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছে।’
গত কয়েক বছর ধরেই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সরকারের নীতি নির্ধারণীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এবার নির্বাচনে যেমন মনোনয়ন পেয়েছেন অনেক বেশি ব্যবসায়ীরা তেমনই মন্ত্রিসভাতেও ব্যবসায়ীদের প্রভাব প্রতিপত্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। তাছাড়া সরকারের অনেক নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের প্রভাব বেড়েছে আমলাদের চেয়ে। আর এর কারণেই অনেকে মনে করছেন, ব্যবসায়ীরা এখন ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশ ঘিরে ফেলেছেন। আর তাদের কারণে আমলারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
অন্যসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্যসচিব বা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের যে প্রভাব এবং ক্ষমতাকেন্দ্রে তার যে দৃশ্যমান উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত সেটি এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। বরং ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশে প্রভাবশীল ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাহলে কি আমলাতন্ত্রের অবসান ঘটতে যাচ্ছে? অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনটি মনে করেন না। তারা বলছেন, আমলারা সবসময় কোণঠাসা অবস্থা থেকে ক্ষমতা বৃত্তে জায়গা করে নেন। এখন সরকার কেবল গঠিত হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমলাদের প্রভাব প্রতিপত্তি দুটোই বাড়বে।’