নিজস্ব প্রতিবেদক: গণমাধ্যমে এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের হাড়ির খবর তাদের অবৈধ সম্পদের ঠিকানা খুঁজতে ব্যস্ত দেশের গণমাধ্যমগুলো। একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান হচ্ছে। কোন গণমাধ্যমই যেন এ ব্যাপারে কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে।
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের যে বিপুল অবৈধ বিত্তের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে যা নিয়ে সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, তার রহস্য উন্মোচনের জন্য প্রধান ভূমিকা রাখছে দেশের গণমাধ্যমগুলো। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন যে, নানা রকম আইনি জটিলতার কারণে গণমাধ্যম এখন সঙ্কটের মুখে, গণমাধ্যম সত্য প্রকাশে ভয় পাচ্ছে’।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা বিভিন্ন ধরনের কালাকানুন যে, স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে কোন বাধা নয় সেটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে। আর গণমাধ্যমের ভূমিকার কারণেই এখন প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রথম বেনজীরের অবৈধ সম্পদের তথ্য প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ। কালের কণ্ঠের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরই এটি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং আদালতের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে তদন্ত করে।
এর পর আছাদুজ্জামান মিয়ারও দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক মানবজমিনে। এটি প্রকাশের পরপর অজ্ঞাত কারণে মানবজমিনের অনলাইন থেকে তা সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটি অন্যান্য গণমাধ্যমগুলো লুফে নেয় এবং আছাদের বিভিন্ন সম্পদের তথ্যগুলো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদিও আছাদুজ্জামান মিয়া দাবি করেছেন যে, তিনি দুর্নীতি করেননি। আগামীকাল তার দেশে ফিরে আসার কথা। দেশে ফিরে তিনি এ নিয়ে কথা বলবেন বলেও জানা গেছে।’
অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে যে, আছাদের ব্যাপারেও তারা তদন্ত করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে তা তদন্ত করার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের।’
আছাদকে নিয়ে যখন আলোচনা সমালোচনা চলছে, ঠিক সেইসময় সামনে এসেছে এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তার ছেলের এক ছাগল কেনা নিয়ে যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। তার ছেলের এই ছাগল কাণ্ডের ফলে তার যে দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হয়েছে তা ভয়াবহ। কারও কারও মতে, মতিউর রহমানের সম্পদ বেনজীরকেও হার মানিয়েছে।
সাধারণ মানুষ মনে করে বেনজীর, আছাদ বা মতিউর রহমান একা নন, এরকম বহু সরকারি কর্মকর্তা আছে যারা দুর্নীতিবাজ। গণমাধ্যম এখন এই বিষয়গুলো নিয়ে মনোযোগী হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ রকম বেশ কিছু দুর্নীতিবাজের নানা রকম তথ্য গণমাধ্যমে আসবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। গণমাধ্যমগুলোতে এ ব্যাপারে বিভিন্ন রিপোর্টারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারা কানাডায় বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছেন, কারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কাদের কি সম্পদ আছে তা নিয়ে একটি অনুসন্ধানের অনুশীলন হচ্ছে রীতিমতো। আর এই অনুসন্ধানের ফলে জাতি উপকৃত হবে।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেউ যেন ভিক্টিম না হয়। কোনো ব্যক্তিকে বিনা দোষে যেন মিডিয়া ট্রাইয়ালের শিকার না হতে হয়। সত্যিকার দুর্নীতিবাজকে খুঁজতে গিয়ে যেন ভুল তথ্য এবং অসত্য, বানোয়াট তথ্য দিয়ে কাউকে হেনস্তা করা না হয়। এবং এরকম যদি করা হয় তাহলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানই শেষ পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে গণমাধ্যমকে সতর্কতার সঙ্গে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্ৰহণ করতে হবে।’