নিজস্ব প্রতিবেদক: বেনজীর আহমেদকে গত ৬ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন তলব করেছিল। সরজমিনে তার বক্তব্য এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বেনজীর আহমেদকে। কিন্তু বেনজীর আহমেদ এদিন হাজির হননি। ৮ জুনের আগেই তার আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিনের সময় প্রার্থনা করেছিলেন সাবেক পুলিশপ্রধান। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে আবার ২৩ জুন তলব করেছে। আগামী রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতেই হবে বেনজীর আহমেদকে। যদিও ঐদিন তিনি হাজিরা দিতে ব্যর্থ হন তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে জানা গেছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন অনুযায়ী এরপর তারা বেনজীর আহমেদকে হাজির করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করবেন এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্যও আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য যে, বেনজীর আহমেদের ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্যাদি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত দুদককে এই তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছিল। তদন্ত করতে চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের তথ্য প্রাথমিকভাবে পায় এবং এই প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালতের কাছে দুই দফায় দুর্নীতি দমন কমিশন বেনজীরের বিপুল সম্পদ ক্রোক করার অনুমতি প্রার্থনা করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেনজীরের বিপুল সম্পদ এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।’
অবশ্য এ সব ঘটনার আগেই বেনজীর আহমেদ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি এখন কোথায় অবস্থান করছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কোন কোন মহল বলছেন, তিনি দুবাই অবস্থান করছেন। কারও কারও মতে, তিনি তুরস্কে অবস্থান করছেন। বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন বলেও কোনো কোনো গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে তার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে সুনিশ্চিত ভাবে কোন তথ্য কেউ দিতে পারেনি। তবে বিদেশে থেকেও বেনজীর আহমেদ তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ঢাকায় যোগাযোগ করেছেন এবং তার আইনি প্রক্রিয়া নিয়েও তিনি কথা বলছেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, আপাতত বেনজীর আহমেদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে, হয়রানির শিকার হতে পারেন-এই কারণেই বেনজীর হয়তো দেশে ফিরবেন না।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বেনজীর আহমেদ ইতোমধ্যে তুরস্কের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং সেখানকার পাসপোর্ট নিয়ে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। সেটি যদি সত্যি হয় তাহলে বেনজীর আহমেদের আপাতত দেশে ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই। আর সে ক্ষেত্রে বেনজীর আহমেদের মামলার আইনি প্রক্রিয়া কী হবে সে সম্পর্কে আইনজীবীরা বলছেন যে, যদি দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে সাড়া না দিয়ে বেনজীর বিদেশে অবস্থান করেন, তাহলে দুদকের আইন খুবই পরিষ্কার। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য আবেদন করবেন। এরপর তাকে ফেরারি ঘোষণা করা হবে। এই অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে মামলাকে এগিয়ে নেবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন অনুযায়ী একজন আসামি যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার অনুপস্থিততে বিচারে আইনগত কোন বাঁধা নেই। সে ক্ষেত্রে বেনজীর আহমেদ পালিয়ে থাকলেও তার বিচার বাঁধাগ্রস্ত হবে না। বরং এক্ষেত্রে বিচার আরও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। আর এ কারণেই দুদকের মামলায় পালিয়ে থাকার চেয়ে আত্মসমর্পণ করাই সঠিক বলে অনেকে মনে করেন। তবে বেনজীর আহমেদ কি করবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত সে সমস্ত মনোভাব দেখা যাচ্ছে তাতে আগামী ২৩ জুন তার ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।’