নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদকে নিয়ে যখন সারা দেশ তোলপাড় তার দুর্নীতির এবং বিস্ময়কর সম্পদের স্ফীতির গল্প হাটে মাঠে ঘাটে আলোচিত হচ্ছে সে সময় আরেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার নানা রকম দুর্নীতির কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়েও চলছে দেশে তোলপাড়। পুলিশ বাহিনী পুরো ঘটনাগুলোতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে এবং এক বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে’।
বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর গৌরব এবং সুনাম দীর্ঘদিনের। কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের দায়ভার পুরো পুলিশ নিতে পারে না এমন বক্তব্য দিচ্ছেন পুলিশের সব কর্মকর্তারা। পুলিশে এরকম বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তি আছেন যাদের জীবন সৎ এবং দুর্নীতি তাদেরকে কখনোই স্পর্শ করেনি। পুলিশের যে সমস্ত প্রধানরা অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কারোই বেনজীরের মতো এমন বিপুল সম্পদ নেই। বরং অনেকে সততার এক অনবদ্য নজির স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে বেনজীরের আগে যিনি পুলিশ প্রধান ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী তার সততা এবং দুর্নীতির মুক্ত থাকা সকলের কাছে আলোচিত বিষয়। তিনি একজন অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হন। এছাড়াও পুলিশের বর্তমান প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে নিয়েও পুলিশের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা গর্বিত। তিনি একজন নির্ভেজাল সৎ মানুষ। দুর্নীতি যাকে স্পর্শ করেনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি নিজেকে সবসময় বিতর্ক থেকে মুক্ত রেখেছেন।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, অধিকাংশ পুলিশের কর্মকর্তারা সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেন। কিন্তু দু একজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে পুরো পুলিশ প্রশাসন সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, বেনজীর আহমেদের ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশে যারা সৎ এবং অনুকরণীয় তাদেরকে নিয়ে আলোচনা কম হয়। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আলোচনা হয়।
বেনজীর আহমেদের বিষয়টি পুলিশকে যেমন বিব্রত করেছে তেমনি আছাদুজ্জামান মিয়ার বিভিন্ন সম্পদের বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই হতবাক হয়ে পড়েছেন। এই সব নেতিবাচক অবস্থাগুলো পুলিশের ওপর একটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এই বিষয়টিতে সরকারও একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।’
প্রশ্ন এসেছে সরকার এখন এ সব বিষয় নিয়ে কি করবে? সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের অবস্থান খুব সুস্পষ্ট। সরকার কোনভাবেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না এবং দুর্নীতি যিনি করবেন তিনি যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে সরকার নির্মোহ ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন সুস্পষ্টভাবে বলেছে যে, প্রাচীন ভাবে বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের ব্যাপারে তারা যে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে তা সঠিক বলে তারা মনে করেছে। খুব শিগগিরই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ভাবে মামলা করা হবে। কিন্তু বেনজীর আহমেদ দেশের বাইরে চলে গেছেন। ইতোমধ্যে তার কিছু সম্পত্তি জব্দ করা হলেও তার আসল এবং বিপুল সম্পত্তি দেশের বাইরে সুরক্ষিত বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে যে, আছাদুজ্জামান মিয়ার কি হবে? তার এই বিপুল সম্পত্তির ব্যাপারে কোন তদন্ত হবে কি না।
এ ব্যাপারে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে, এ বিষয়ে তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, এর আগেও আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছিল। সে সময় আছাদুজ্জামান মিয়ার এই অভিযোগ গুলো তদন্ত করে তার সততা দুর্নীতি দমন কমিশন পায়নি বলে বলা হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন করে যখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তখন সরকার কি করবে সেটা বুঝা যাবে ঈদের ছুটির পরপরই।’