ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: বাংলাদেশ জুড়ে এখন ব্যাপক আলোচনায় রাসেল ভাইপার, সঙ্গে জেলায় জেলায় আতঙ্ক। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় এটির স্থান নাকি দুই নম্বরে। এও দাবি করা হচ্ছে, মানুষ দেখলে নাকি দূর থেকে তেড়ে এসে কামড় বসিয়ে দেয় রাসেল ভাইপার।
কতটা সত্যি এসব দাবি? আসলেই কি বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় দুই নম্বরে রাসেল ভাইপার? আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ঘেঁটে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর ১০টি সাপের তালিকা। এটি পড়লেই পরিষ্কার হবে, রাসেল ভাইপার আসলে কতটা ভয়ংকর এবং বিষধর সাপের তালিকায় কত নম্বরে।
১০. র্যাটল স্নেক
যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় এই সাপ। এদের লেজের দিকে ঝুনঝুনি সদৃশ বিশেষ অঙ্গ থাকে, যার সাহায্যে তারা শব্দ করতে পারে। এরা শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ লাফিয়ে আক্রমণ করে। উত্তর আমেরিকার সব থেকে বিষধর সাপ র্যাটল স্নেক। এই সাপে কামড়ালে শিশুদের দ্রুত মৃত্যু হয়।
এই সাপের বিষ শরীরের টিস্যু নষ্ট করে ফেলে এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে এর সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। এই সাপে কামড়ানোর পর শ্বাসকষ্ট, প্যারালাইসিস, বমি, রক্ত বমি, চেতনাহীন হয়ে পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় র্যাটল স্নেক রয়েছে ১০ নম্বরে।
৯. ডেথ এডার
বিষের দিক থেকে এই সাপ রয়েছে নবম স্থানে। নামের সঙ্গে এ সাপের কামড়েরও যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউগিনিতে এই সাপ দেখতে পাওয়া যায়। ডেথ এডার মূলত অন্য সাপকে তাড়া করে কামড়িয়ে মারে এবং খেয়ে ফেলে। এক কামড়ে এই সাপ ৪০-১০০ মিলিগ্রামের মত বিষ ঢেলে দেয়।
ডেথ এডার সাপে কামড়ালে শ্বাস কষ্ট ও প্যারালাইসিস দেখা দেয়। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কামড়ে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে থাকে। এই সাপ একবার বিষ ঢালার পর দ্রুততম সময়ে এদের বিষ থলিতে আবারও বিষ উৎপাদন করতে পারে।
৮. ভাইপারস
ভাইপারস মূলত সাপের একটি জাত। এই জাতের অনেক ধরনের সাপ আছে। সারা বিশ্বেই ভাইপারসদের দেখা যায়। রাসেল ভাইপার মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়ার ভারত, চীন এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়। গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশেও এই সাপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চলতি বছর এই সাপ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি।’
রাসেল ভাইপার প্রজাতির সাপ খুব দ্রুত রেগে যায় এবং প্রধানত রাতের বেলা শিকারে বের হয়। এরা খুব দ্রুত আক্রমণ করে থাকে। ভাইপারসে কামড়ালে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। পরে শ্বাসকষ্টের সঙ্গে প্যারালাইসিস দেখা দেয় এবং হৃদস্পন্দন আস্তে আস্তে কমে যায়। হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়। চিকিৎসায় কেউ কেউ সুস্থ হলেও অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটে। উপমহাদেশে সাপের দংশনের ৪৩ শতাংশ রাইসেল ভাইপারের।
এই সাপে কামড়ালে শরীরের উপর থেকেই বোঝা যায় যে রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়। যদি দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায় তাহলেও দুই-চার সপ্তাহ নাগাদ কামড়ের স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে।’
ভাইপার প্রজাতির সাপ বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় ৮ নম্বরে রয়েছে। তবে এই প্রজাতির সাপের মধ্যে রাসেল ভাইপারই সবচেয়ে ভয়ংকর কি না, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। তাই রাসেল ভাইপারকে যে বিশ্বের দ্বিতীয় বিষধর সাপ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, তা আদতে সত্যি নয়।
এছাড়া দূর থেকে মানুষ দেখলে যে এরা তেড়ে এসে কামড় বসায়, তাও সত্যি নয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। অন্যান্য সাপের মতো এরাও তখনই কামড়ায়, যখন কি না এদের কেউ আঘাত করে বা ধরতে যায়। এছাড়া এই সাপ খুবই অলস প্রকৃতির। এক জায়গায় তিন-চার দিন পর্যন্ত পড়ে থাকে। তাই দূর থেকে তেড়ে এসে কামড়ানোর তথ্যটিও সত্যি নয়।
৭.ফিলিপাইনন্স কোবরা
পৃথিবীর সব কোবরাই বিষাক্ত এবং ভয়ানক। কিন্তু অন্যসব কোবরা থেকে ফিলিপাইন কোবরা একটু আলাদা। কোবরা প্রজাতির মধ্যে এরাই সব থেকে বেশি বিষধর। এরা প্রায় তিন মিটার দূর থেকে বিষ ছুড়ে মারতে পারে। এই সাপে কামড়ালে আধা ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু হয়। কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীর অবশ, মাথা ঘোরানো, বমি, মেরুদণ্ডে ব্যথা, পাতলা পায়খানাসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিষধর সাপের মধ্যে এর স্থান ৭ নম্বরে।
৬. টাইগার স্নেক
টাইগার স্নেক অন্যতম বিষাক্ত সাপ। এই সাপে কামড়ানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে মানুষ মারা যায়। এই সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এরা সাধারণত মানুষ দেখলে ভয়ে পালায়। কিন্তু একবার ক্ষেপে গেলে এই সাপ বেশ ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। টাইগার স্নেকের নিশানা কখনো মিস হয় না। বিষধর সাপের মধ্যে এর স্থান ৬ নম্বরে। ৫. ব্ল্যাক মামবা
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ব্ল্যাক বামবা নামক ভয়ংকর এই সাপের দেখা মেলে। ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের জন্য এরা বিশ্বে প্রথম। কোনো ব্যক্তি যদি একবার ব্ল্যাক বামবার পাল্লায় পড়েন, তাহলে কামড় না খেয়ে ফিরে আসতে পারবেন না। কারণ এই সাপ যাদের উপর ক্ষেপে যায়, তাদেরকে তাড়া করে কামড়ে দেয়। এরা বেশ দ্রুতগামী।
ব্ল্যাক মামবা দেখতে প্রধানত কালো হয়। প্রায় বিশ কিলোমিটার ঘণ্টা গতিতে এরা তাড়া করার ক্ষমতা রাখে। একই সারিতে ১২ বারের বেশি কামড়ে দেয় এই সাপ। এদের প্রতিটি কামড়ে ১০০-১২০ গ্রাম বিষ বের হয়, যা ২৫ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সবচেয়ে বিষধর সাপের তালিকায় এর স্থান ৫ নম্বরে।
৪. টাইপান
এই সাপ অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। টাইপানের এক কামড়ে ১২ হাজার গিনিপিগের মৃত্যুর মতো যথেষ্ট বিষ থাকে। এর বিষ রক্তনালী বন্ধ করে দেয়। এই সাপের কামড় থেকে বেঁচে ফিরেছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। যথার্থ চিকিৎসা দেওয়া হলেও অনেক সময় রোগীকে এক নাগারে বহুদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকতে হয়। সেখান থেকে কেউ ফেরে, কেউ ফেরে না। বিষধর সাপের তালিকায় টাইপান রয়েছে ৪ নম্বরে।
৩. ব্লু ক্রিট
এই সাপ দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতে দেখা যায়। ক্রিট অন্য সাপ শিকার করে এবং খেয়ে বাঁচে। রাতের বেলা বের হয়। অন্ধকারে আক্রমণ করতেই এরা বেশি পছন্দ করে। এই সাপ নিজেদের প্রজাতিকে খেয়ে ফেলে। এই সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর হার ৮৫ শতাংশ। এই সাপের বিষ একবার শরীরে ঢুকলে সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যায়। বিষধর সাপের তালিকায় এটি রয়েছে ৩ নম্বরে।
২.ইনল্যান্ড টাইপান
টাইপান সাপের মধ্যে এই ইনল্যান্ড টাইপান আরেকটি জাত। বিষের কার্যক্ষমতার দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার ইনল্যান্ড টাইপান সাপের অবস্থান দ্বিতীয়। এদেরকে ক্ষুদ্র-আঁশের সাপও বলে। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কাছে সাপটি ‘দানদারাবিল্লা’ নামে পরিচিত।
বলা হয়ে থাকে, এই সাপ এক দংশনে যে পরিমাণ বিষ নির্গত করে তাতে অনায়াসে শতাধিক পূর্ণ-বয়স্ক মানুষের মৃত্যু ঘটা সম্ভব। কোনোরূপ প্রতিষেধক ব্যবস্থা না নিলে এই সাপে দংশনের সময় থেকে মৃত্যুর দূরত্ব মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট।’
ইনল্যান্ড টাইপান ঋতুর সঙ্গে রঙ বদলায়। গ্রীষ্মে জলপাই রঙের আর শীতে ধূসর। আফ্রিকার ব্ল্যাক মামবা বা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার লম্বা কিং কোবরার মতো এরা ক্ষিপ্র ও আক্রমণাত্মক নয়। ভয়াবহ রকমের বিষাক্ত এই সাপ সচরাচর মানুষের সান্নিধ্যে আসতে চায় না, আক্রমণও করতে চায় না। এদের বিষ কোবরার থেকে ১৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।
১. বেলচারস সী স্নেক
প্রাণিকূলে সরীসৃপের মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত হলো বেলচারস সী স্নেক। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূল এবং দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলের সাগরের পানিতে এদের দেখা যায়। এই সাপের এক কামড়ে যতটুকু বিষ বের হয়, তা দিয়ে প্রায় এক হাজার পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করা সম্ভব।
কিন্তু এই সাপটি খুবই শান্ত ও লাজুক প্রকৃতির। বিশেষ করে জেলেদের মাছ ধরার সময় জালের ভেতরে ধরা পড়ে। এই সাপ মাঝে মাঝেই ভূমিতে যায়। পানির নিচে এরা ৭৮ ঘণ্টা দম বন্ধ করে থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে তারা শিকার ধরে এবং বিশ্রাম নেয়।’